নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামসহ ৬ দফা দাবি
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম শ্রমিকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, মজুরি বোর্ড গঠন ও পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করাসহ ছয় দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
মানববন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি তাসলিমা বলেন, বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। এ হিসেবে একজন পোশাক শ্রমিকের মাসিক বেতন অন্তত ২০ হাজার টাকা হওয়া উচিত। সেখানে দেওয়া হচ্ছে আট হাজার টাকার মতো। তিনি আরও বলেন, এই বেতনে সংসার চালানো কতটা কষ্টের, ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যরা বুঝবে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে একজনের আয়ে পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ওই পরিবারের ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে না গিয়ে শিশুশ্রমিকের কাজে যুক্ত হচ্ছে।
এ সময় বক্তারা বলেন, সারাদেশে লাগামছাড়া দ্রব্যমূল্যের কারণে দেশবাসীর জীবন ভয়াবহ বিপর্যস্ত। সন্দেহ নেই, এই অবস্থায় পোশাক শ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষ আছে সবচেয়ে দুর্ভোগে। গ্যাস-তেল-চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে আগুন, শ্রমজীবী-মেহনতিরা দিশেহারা।
তারা বলেন, গ্যাসের দাম ৯৭৫ থেকে ১০৮০ টাকা, ১৮০ টাকার সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে সরকার ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকায়। এর মধ্যে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সয়াবিনের দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৭ টাকা। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ছাপিয়েছে শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা।
শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে জানিয়ে বক্তারা বলেন, মালিকদের আয়, অর্ডার ও রপ্তানি আয় বাড়ছে। বাড়ছে না কেবল শ্রমিকদের মজুরি। এর ফলে কোনো ষড়যন্ত্রের পুরনো আষাঢ়ে গল্পের জালে নয়, বরং পেটের দায়েই বিভিন্ন শ্রমিকাঞ্চলে থেমে থেমে 'দ্রব্যমূল্য কমাও, নইলে মজুরি বাড়াও' এই দাবি উঠছে।
সম্প্ৰতি মিরপুর-উত্তরায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের টানা কয়েকদিনের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ তারই নজির দাবি করে বক্তারা আরও বলেন, আমরা দেখলাম এখানে শ্রমিকদের ওপর নেমে আসলো নির্যাতন। তাদের গ্রেপ্তার করা হলো। এটি সমাধানের পথ নয়। এই মুহূর্তে প্রয়োজন মজুরি বোর্ড গঠন ও বৃদ্ধির উদ্যোগ। শুধু পোশাক শ্রমিকদেরই নয়, বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় টিকে থাকার নিশ্চয়তা বিধানে প্রয়োজন জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণেরও উদ্যোগ।
এ সময় গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতায় আনতে হবে, মিরপুর-উত্তরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মজুরি আন্দোলনকারীদের হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে, অবিলম্বে মজুরি বোর্ড গঠন করে নতুন জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করতে হবে, শ্রমিকের জীবন-জীবিকার মান নিশ্চিতের দায় মালিক, সরকার ও ক্রেতা তিন পক্ষকেই নিতে হবে, নতুন মজুরি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত মহার্ঘ্য ভাতা এবং শ্রমিকদের রেশনিং অধিকারের আওতায় আনতে হবে।
/এএজেড