কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এখন মাদকসেবীদের আখড়া!
অযত্ন-অবহেলায় থাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ এখন মাদকসেবীদের জন্য নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। পর্যাপ্ত আলো না থাকায় সন্ধ্যার পর থেকেই সেখানে মাদকসেবীদের আনাগোনা শুরু হয়। শহীদ মিনারের বেদির পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায় ফেনসিডিলের বোতল, মদের বোতল, গাঁজার উচ্ছিষ্ট, সিগারেটের মূলসহ নানা ধরণের মাদক সরঞ্জাম।
জুতা পায়ে মূল বেদিতে দলে দলে মানুষের বিচরণ। বেদিতেই হকাররা বিক্রি করছে হরেক রকম পণ্য। কুকুর-বিড়ালের বিচরণ তো আছেই। দর্শনার্থীদের খাওয়া বাদামের খোসা, চা-কফির খালি কাপ, পানির বোতল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চারপাশে। ভবঘুরেরা ঘুমাচ্ছে আরামে। আশপাশে ময়লা-আর্বজনার দুর্গন্ধ। দুর্বৃত্তদের আড্ডা জমে। এমন চিত্র ভাষা শহীদদের সম্মানার্থে নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের। অবহেলা, অযত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বছর জুড়েই থাকে এমন বেহাল দশা। শুধু ফেব্রুয়ারি এলেই ঝকঝকে-তকতকে হয় শহীদ মিনার।
শহীদ মিনারে রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। তাই সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবীরা আসতে শুরু করে ওই এলাকায়। অথচ শহীদ মিনারের অবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে। এর পাশেই অবস্থিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। শুধু ফেব্রুয়ারি এলেই শুরু হয় শহীদ মিনার ধোয়ামোছা ও সংস্কারের কাজ। প্রতি বছর এভাবেই চলে। বছরের বাকি সময়টায় শহীদ মিনার পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি রকিবুল ইসলামের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বেশিরভাগ সময় ফেনসিডিলের বোতল, মদের বোতলসহ নানা ধরণের মাদকের সরঞ্জাম পড়ে থাকতে দেখা যায়। দেয়াল, তোরণ না থাকার কারণে বহিরাগতরা সহজেই শহীদ মিনারে প্রবেশ করে পরিবেশ দূষিত করছে। এ ব্যাপারে একাধিকবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি আমরা। মাদক সেবীদের আড্ডা দিনে দিনে শহীদ মিনারে বাড়ছে, সেখানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা এবং প্রবেশপথে একটি গেটের ব্যবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, মাদকসেবীদের আনাগোনা বন্ধ করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শহীদ মিনারের এরকম অবস্থা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদ আলী বলেন, 'শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ফেনসিডিলের বোতলসহ মাদকের সরঞ্জাম পাওয়া যায়, এটি লজ্জার বিষয়। পবিত্র শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে এভাবে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।' জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার জানান, পুলিশ টহল যখন থাকে না, তখন মাদকসেবীরা সুযোগ নেয়। মাদক সেবনের সংবাদ পেলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এখানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করলে অপরাধ কমে আসবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, এটি নতুন কোন বিষয় না, এটা সবাই জানে সে ভাবেই চলছে। মাদকসেবনকারীরা নিরাপদে এ জায়গার অপব্যবহার করছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লাইটিং এর ব্যবস্থা করলেও দেখা যায় সেটা থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন এর সুরাহা করতে পারছেনা। এখন আমার কাছে প্রশ্ন হচ্ছে মাদক সেবনকারীরা বা মাদক ব্যবসায়ীরা বেশি শক্তিশালী নাকি রাষ্ট্র? তিনি বলেন, এ বিষয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অর্থাৎ প্রশাসন যদি একটু শক্ত হয় তাহলে আমাদের সম্মানের জায়গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মাদকসেবনকারী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের আখড়া নিয়ন্ত্রণে আসবে।
কেএম/এএজেড