রূপনগরে টিন শেডের আবাসন ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ
মিরপুর রূপনগরের আবাসিক এলাকার লিংক রোডে অবস্থিত একটি টিন শেডের আবাসন স্থান ভেঙে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এমন অভিযোগ করেছেন ভেঙে দেওয়া একাধিক টিন শেডের বাসিন্দা ও বাড়ির মালিক।
এসময় বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করে বলেন, মোটা অংকের টাকা খেয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তোফাজ্জল হোসেন (টেনু) ও থানার ওসি আরিফুর রহমান সরদার এসব ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছেন।
বুধবার (১৮ মে ) রাতে মিরপুর রূপনগর এলাকার ১ নম্বর রোডের ৩১ নম্বর আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে ভেঙে দেওয়া বাড়ির একাধিক বাড়িয়ালার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এসময় ভাড়াটিয়া শাহাদাত ও রোজিনা বলেন, ভেঙে দেওয়ার আগে রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান সরদার এলাকার মানুষের সঙ্গে রাগারাগি করেন। তাদের দাবি ওই রাগারাগির পর তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই (গৃহায়নের প্লট) অস্থায়ী বসবাসরতদের বাড়ি ঘর ভেঙে দেন।
বাড়িয়ালারা অভিযোগ করে বলেন, কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। টিন শেডের বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের দাবি, প্রায় ৫ থেকে ১০ বছর ধরে তারা গৃহায়ন অধিদপ্তরের এ জায়গায় ঘরবাড়ি উঠিয়ে বসবাস করে আসছেন।
বাড়িওয়ালা নজরুল মিয়া ও আবুল হোসেন বলেন, যদি সরকারিভাবে ভেঙে দেওয়া হয় তাহলে ১০ থেকে ১৫ দিন আগে আমাদের নোটিশ দেওয়া হবে কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ বা কোনো সংস্থা কোনো প্রকার নোটিশ না দিয়ে বসত বাড়ি ভেঙে দিয়েছে।
বাড়িয়ালারা বলছেন, রূপনগরের টিন শেডের এ আবাসিক এলাকায় প্রায় ১৫০০-২০০০ মানুষ বসবাস করে। বাড়িয়ালাদের ঘর ও ভাড়াটিয়াদের বসবাসের জায়গা ভেঙে দেওয়ায় তারা জন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ঘরবাড়ি ও বাসাবাড়ি ভেঙে দিয়েছে। এখন এই মানুষগুলো রাতে কোথায় থাকবেন।
মিরপুর রূপনগর এলাকার ১ নম্বর রোডের ৩১ নম্বর লিংক রোডে কথা হয় বাড়িওয়ালা পারভীনের সঙ্গে। এ সময় পারভীন অভিযোগ করে বলেন, থানা পুলিশ মৌখিকভাবে আমাদের জানিয়েছে এখানে ১০ কাঠা ভাঙা হবে আমরা ১০ কাঠা মেনে নিয়েছিলাম এখন ১০ কাঠার নামে পুরাটাই ভেঙে দিয়েছে। তিনি বলেন, এ রাতে ছেলে মেয়ে নিয়ে আমরা থাকব কোথায়?
কথা হয় বাড়িওয়ালা শাহেদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকার কাউন্সিলর ও থানার ওসির চক্রান্তে আমাদের এই বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং এ বিষয়ে আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন করব।
কবির, জাহাঙ্গীর, মিন্টু মিয়া, দিপা আক্তার, শান্তা পারভীন, নিপাসহ একাধিক বাড়িওয়ালা জানান, অনেক কষ্ট করে আমরা তিলে তিলে এখানে বাড়িঘর তৈরি করেছি। আমরা জানি এটা সরকারি জায়গা হয়তো কোনো এক সময় ভেঙে দেওয়া হবে কিন্তু কোনো নোটিশ না দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি ঢাকাতে বাসা আগে থেকে না নেওয়া হলে বাসা পাওয়া যায় না। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রাতে কোথায় থাকব?
এ সময়ে তারা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর থানার ওসি মোটা অংকের টাকা খেয়ে আমাদের উচ্ছেদ করেছে। তারা বলেন, কোনো ভাবেই এটা মানব না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তোফাজ্জল হোসেন টেনু বলেছেন, এটাতো আমাদের বাজার। যারা বাসা-বাড়ি তৈরি করেছে তাদের জায়গা না এটা। সরকারি জায়গা সরকার ভেঙে দিয়েছে আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে ছিলাম এর চেয়ে বেশি কিছু না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান সরদার ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, নগরের যে আবাসন স্থান ভেঙে দেওয়া হয়েছে ওটা ছিল আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ সাহেবের প্লট। তিনি বলেন, ওটা ভেঙে দেওয়া হয়নি উচ্ছেদ করা হয়েছে।
আপনাদের কাছে অফিশিয়াল কোনো নোটিশ ছিল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি কোনো নোটিশ ছিল না তবে সরকারি জায়গা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে দেওয়ার সময় একজন ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তবে সেই ম্যাজিস্ট্রেটের নাম এখন আমি বলতে পারছি না।
আপনি রেষারেষির জের ধরে ভেঙে দিয়েছেন অভিযোগ করেছেন বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ারা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই জায়গার মালিক তো আমি না সরকারি জায়গা ভেঙে দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে এর থেকে ভালো কিছু বলতে পারি না।
গরিব মানুষের বসবাসের ওই জায়গাটি ভেঙে দিয়ে দি রেইনবো প্যাকেজ অ্যান্ড প্রিন্টার্স, প্রোপাইটার: শাহান আরা বেগম, ২৫/১, লেক সার্কাস,কলাবাগান, ঢাকার একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। ওই সাইনবোর্ডটি কার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাইনবোর্ড লাগানো হয়নি ওই সাইনবোর্ডের সম্পর্কে এখন কিছু বলতে পারছি না হয়তো কারো হবে।
কেএম/এসএন