ডায়রিয়া পরিস্থিতি উদ্বেগজনক
মানুষ হাত ধোয়ার অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছে, একারণে ডায়রিয়া: ওয়াসা এমডি
মার্চ মাস থেকে উদ্বেগজন হারে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) সূত্র মতে গত বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) ১ হাজার ৩৩১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। যা বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাস শুরু হলেই ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এ সময়ে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানিতে জীবাণুর সংমিশ্রণ ঘটে। সেজন্য ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। তবে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসীম এ খান বলেন, মানুষ হাত ধোয়ার অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছে, একারণে ডায়রিয়া হচ্ছে, ওয়াসার পানিতে সমস্যা নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী। ১ মার্চ থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক উদরময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) ছিল ৫১০ জন। এরপর প্রতিদিনই বাড়তে থাকে। মার্চের শেষ তিন দিনে অর্থাৎ ২৯, ৩০, ৩১ তারিখে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৩৩৪, ১ হাজার ৩১৭, ১ হাজার ৩৩১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক রোগতত্ত্ববিদ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এসময় যেহেতু মানুষের তৃষ্ণা পায় বেশি তখন বাইরের পানি পান করে বেশি। বাইরের পানি সাধারণত অপরিস্কার থাকে। সেজন্য যেহেতু এই সময় শুষ্ক মৌসুম, সে কারণে পানিও শুকিয়ে যায়। সে কারণে কোন ধরণের পানি ব্যবহার হচ্ছে সেটাই প্রধান। ডায়রিয়ার জীবাণু মূলত খাবারের মাধ্যমে অথবা পানির মাধ্যমে ছড়ায়। বাচ্চারা যেহেতু বাইরের খাবারটা বেশি খাচ্ছে সেকারণে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সুতরায় সুস্থ থাকাতে হলে যেসব কারণে ডায়রিয়া ছড়ায় তা চিহ্নিত করে সেগুলো পরিহার করা।
প্রায় একই পরামর্শ শ্যামলী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার-এর। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এই সময় যেহেতু তাপমাত্রা বেশি তাছাড়া পানির স্তরও নিচে নেমে যায় যে কারণে পানিতে বিভিন্ন জীবাণু সংমিশ্রণ বেড়ে যায়, ফলে ডায়রিয়াও বেড়ে যায়। এই অবস্থা থেকে নিজেকে সুরক্ষার জন্য খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাইরে না যাওয়াই উত্তম। ছোট্ট বাচ্চাদের বাইরের খাবার কম খাওয়াতে হবে। আর পারলে পরিস্কার খাবার খাওয়ার চেস্টা করতে হবে।
ডায়রিয়া যেহেতু পানি বাহিত রোগ, তাই ঢাকার পানি সাপ্লাই সংস্থা ঢাকা ওয়াসাকে দায়ি করছেন অনেকে। কেউ কেউ বলেছেন ওয়াসার নোংড়া পানির কারণেই ডায়রিয়া বাড়ছে।
এ অভিযোগের বিষয় জানতে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসীম এ খানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘পানির কোন রকম কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন হয় নাই। সারা বছর যা চলছিল, তাই আছে। গুণগত মানেও কিছু পরিবর্তন হয় নাই, সংখ্যাগত মানেও তেমন কিছু পরিবর্তন হয় নাই। ’
তিনি বলেন, আইসিডিডিআরবি থেকে খবর পেয়ে ঐসব জায়গাগুলোর পানি আবার ল্যাবরেটরি টেস্ট করেছি। ভালো খবর যে বিশেষ তেমন কোন ব্যত্য়য় পাওয়া যায় নাই। প্রত্যেক দিনের পানি টেস্ট করলে যা পাই কম বেশি ভাল খারাপ তাই আছে। সেখানে ডায়রিয়া কলেরার কোনো রকম জীবাণু আমরা কোথাও খুঁজে পাই নাই। যে সমস্ত জায়গা থেকে মানুষ আইসিডিডিআরবিতে যাচ্ছে সেই সমস্ত জায়গায় এবং তার আশেপাশে আমরা পানি পরীক্ষা করেছি তাতে বড় ধরণের কোনো কিছু পাইনি। আসলে হলো মানুষ হাত ধোয়ার অভ্যাসটা ছেড়ে দিছে। ডায়রিয়ার মূল কারণ ফুডপয়েজনিং। হাত না ধোয়ার কারণে ফুডপয়েজনিংটা হয়। তাছাড়া রাস্তাঘাটে সর্বত্র নোংড়া পানি খাচ্ছে যে কারণে এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওয়াসার পানিতে কোনো সমস্যা নাই।
এসএম/