সোয়া দুই ঘণ্টায় মৎস ভবন থেকে ফার্মগেট
’মাপ চাই, আর না, আগামীকাল থেকে মোটরসাইকেল নিয়েই বের হব। হ্যাঁ, আমরা যারা মোটরসাইকেল চালাই, তাদের জন্য এভাবে বসে থাকা তো আসলে অসম্ভব ব্যাপার।’
পাবলিক বাসে জ্যামে বসে থেকে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দুই সহযাত্রী। কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছিল তারা একে অপরের পরিচিত এবং একসঙ্গে কোথাও যাচ্ছেন।
রাজধানীর মৎস ভবন মোড় থেকে উঠে ফার্মগেটের দিকে যাওয়া এলাইক নামের একটি পাবলিক বাসে চড়ে ট্রাফিক জ্যামে অতিষ্ট হয়ে ওঠা এই দুই সহযাত্রীর বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছিল এভাবেই।
বুধবার (৩০ মার্চ) বাসটি সন্ধ্যা সাতটার দিকে মৎস ভবন মোড় থেকে শাহবাগ পেরুতেই আধা ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। এই সময়ে বিআরটিসির অন্তত দুটি ডাবল ডেকার বাস মৎস ভবন মোড় থেকে শাহবাগ মোড়ের দিকে এগোলেও মাঝামাঝিতে এসে ইউটার্ন নেয়।
বাস ভর্তি যাত্রী নিয়ে ডাবল ডেকার পাবলিক বাস ইউটার্ন নেওয়ার কারণ বোঝার চেষ্টা করলে এলাইক বাসের কন্ডাকটর ইসমাইল হোসেন বলেন, বাসগুলো পেছন ফিরে মৎস ভবন মোড় থেকে কাকরাইল মসজিদের সামনে দিয়ে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের সামনে দিয়ে বাংলামটরের দিকে যাবে। তাতে জ্যাম কিছুটা কম পড়বে।
কিন্তু তাই যদি হবে, তাহলে সব বাসই তো তা করার কথা। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে কন্ডাকটর একটি ডাবল ডেকার বিআরটিসি বাসের গায়ে থাকা লেখার দিকে দেখিয়ে বলেন, এগুলো ঢাকা ইউনিভার্সিটির বাস। ট্রাফিক এসব বাস আটকায় না। কিন্তু আমরা গেলেতো আটকে জরিমানা করে দেবে। তা ছাড়া যে সেব যাত্রী শাহবাগে নামবে, তাদেরকে শেরাটন হোটেলের কাছে নামাতে হবে, তাই গাড়ি ইউটার্ন করতে গেলেই তারা ‘চিল্লাচিল্লি’ করবে। কিন্তু ওগুলোতো (বিআরটিসি) ইউনিভার্সিটির গাড়ি তাই তারা যাত্রীদের এত বেশি পাত্তা দেয় না।
এলাইক বাসটি সোয়া নয়টার দিকে ফার্মগেটে পৌঁছায়। সামান্য দূরত্ব পেরোতে যাত্রীদের দীর্ঘ এই অপেক্ষার মধ্যে নানামুখী তিক্ততা- অসন্তোষের চিত্র উঠে আসে। এরমধ্যে কেউ সরকারের সমালোচনায় ফেটে পড়ছেন, আবার কেউ সরকারকে করণীয় বাতলে দিচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের এসব আলোচনায় উঠে আসে আসন্ন রমজান এবং রমজানে ট্রাফিক জ্যামের শঙ্কার কথাও।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কেউ বলছেন, রমজানে ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা উচিৎ। আবার কেউ বলছেন, করোনা দীর্ঘ দুই বছর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা কিছু হয়নি, তাই কষ্ট হলেও রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা উচিত।
শাহবাগ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ। তাই নির্মাণাধীন মেট্রোরেল বা বিদ্যমান ফ্লাইওভারে জ্যাম কতটা কমবে বা কমেছে তাও আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
আলোচনায় কেউ বলছেন, এসব নির্মাণ করে কিছু হবে না, জ্যাম কমবে না। আবার কেউ বলছেন, এখন দেরীতে হলেও বাস গন্তব্যে পৌঁছায়, ফ্লাইওভারগুলো না হলে তাও হতো না।
এরমধ্যে শাহবাগ পার হতেই যখন বৃষ্টি নামলো এবং ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করল, বাসের সিটে বসতে পারা যাত্রীদের কেউ কেউ তখন ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়লেন, তবে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ার কারণে হুড়মুড় করে অনেকে বাসে ঢুকে পড়েন, তাতে ঘুম ভেঙে যায় তাদের। বাসের ভেতরকার গাদাগাদি পরিস্থিতি অধিক থেকে অধিকতর হতে থাকে।
এমএ/এমএমএ/