অনেকবার নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিলেন টিপু: স্ত্রী ফারহানা
রাজধানীর শাহজাহানপুরে ইসলামিয়া হাসপাতালের সামনে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে কয়েক দফা হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর অনেকবার নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি।
ডলি বলেন, ‘আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তাকে হত্যা করার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল তারা। আজ তারা সফল হয়েছে। তিনি পুলিশ প্রশাসনের কাছে অনেকবার নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন কোনো সাড়া দেননি। তারা যদি সাড়া দিতে আজ তাকে হত্যা করতে পারতে না।’
শুক্রবার (২৫ মার্চ) ঢামেক হাসপাতালে নিহতের স্ত্রী ডলি এসব অভিযোগ করেন।
হাসপাতালে নিহতদের আত্নীয়-স্বজন ও নেতা-কর্মীরা একনজর দেখতে আসেন। তাদের কান্নায় হাসপাতাল ও মর্গ এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
জাহিদুল ইসলাম টিপু মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় টিপু গাড়িতে ছিলেন। গুলিতে তার গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না (২৬) আহত হয়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থী প্রীতি রিকশায় ছিলেন। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাত সোয়া ১১টার দিকে তিনজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত মুন্না হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মোল্ল্যা। তিনি জানান, নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদি হয়ে মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-১৮। অভিযোগে তিনি কারো নাম উল্লেখ করেননি। অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে অভিযোগ করেছেন।
মতিঝিল বিভাগের সবুজবাগ জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মনতোষ বিশ্বাস তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। তবে ঘটনাস্থলে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্হল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
গুলিবিদ্ধ গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না জানায়, টিপু স্যারকে নিয়ে মতিঝিলের এজিবি কলোনি থেকে গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তায় যানজট ছিল। শাজাহানপুর আমতলা মসজিদ এলাকায় যাওয়া মাত্রই এক ব্যক্তি হেলমেট ও মাস্ক পরে আমাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। আমরা দুজনই গুলিবিদ্ধ হই। পরে আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে স্যার মারা যান।
তিনি আরও বলেন, আমার স্যারের বাসা খিলগাঁও বাগিচা এলাকায়। তিনি মরহুম মমিনুল ইসলামের ছেলে। তার স্ত্রী ডলি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
এদিকে সামিয়া আরেফিন প্রীতি রাজধানীর বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের অর্নাসের শিক্ষার্থী ছিলেন।
নিহত শিক্ষার্থী প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, আমার মেয়ে শাহজাহানপুর এলাকায় রিকশায় ছিল। হঠাৎ একটি গুলি এসে তার শরীরে লাগে। সে রিকশাতেই লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাদের বাসা শাহজাহানপুরের শান্তিবাগ এলাকায় বলে জানান তিনি।
পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিপণী বিতানের সামনে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় মিল্কির ছোট ভাই রাশেদুল হক খান বাদি হয়ে গুলশান থানায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার আসামি ছিলেন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু। পরে তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা পায়নি পুলিশ। তখন তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
এসএন