বইমেলা: খাবারের ‘গলাকাটা’ দাম
একুশে বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে খাবারের দোকানগুলোতে দাম অনেক বেশি রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
শুক্রবার (১১ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি দোকানের খাবার।
সরেজমিনে দেখা যায়, সমুচা- ১০ টাকা, চিকেন সমুচা- ১২ টাকা। ‘সচেতনতাই সুস্থতা’ শিরোনামে মেট্রো বেকারসের পণ্যের মূল্য তালিকায় দুটি পণ্যের এই মূল্য দেওয়া আছে। চলমান অমর একুশে বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে এটি খাবারের একটি দোকান। দোকানের ব্যানারে জানান দেওয়া আছে মেট্রো বেকারস ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি উদ্যোগ। দোকানের কর্তব্যরতদের সবাই পুলিশ বাহিনীর সদস্য। তাদের একজন সাব ইন্সপেক্টর আবদুল হক। মাত্র দুই টাকা বেশি নিয়ে সমুচায় চিকেন দিচ্ছেন কীভাবে? এই প্রশ্নের জবাবে বললেন, তাতো জানি না। সেটা কর্তৃপক্ষ জানে। কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করে। আমরা এখানে বিক্রি করি। তবে দোকানে কর্তব্যরত আরেকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, মুরগি দেয় আর কি ‘লামসাম’ বুঝেন না!
দোকানে রাখা মূল্যতালিকার নিচে ফোন নম্বর দিয়ে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে এই নম্বরে অভিযোগ করা যাবে। ওই নম্বরে ফোন দিলে সাব ইন্সপেক্টর শেখ আজমিনুর রহমান ঢাকাপ্রকাশের কাছে দাবি করেন, এই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে অনেক আগে, যখন মুরগির দাম কম ছিল। এখনও দেওয়া হচ্ছে, লাভ কম হয় আরকি।
লাভ কম করার মানসিকতাই যদি থাকে, তাহলে তো সাধারণ সামুচার দামও ১০ টাকা থেকে কমিয়ে নিতে পারেন। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, দাম কমাতে হলে আবার মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির মাধ্যমে কমাতে হবে।
মেলায় মেট্রো বেকার্সের সামনের দোকানটির নাম ‘সুলতান বিরিয়ানি হাউজ’। দোকানে ‘কিনলে’ ব্রান্ডের এক বোতল পানি দেখিয়ে দাম জানতে চাইলে বললেন ২০ টাকা। অথচ বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা আছে ১৫ টাকা। ১৫ টাকার স্থলে ২০ টাকা, মানে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি দাম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে দোকানের মালিক বিএম হান্নান বললেন, পজিশনের জন্য বাংলা একাডেমিকে দিতে হয়েছে সাত লাখ টাকা। আবার ডেকোরেশন খরচ আছে।
কিন্তু বাইরে সব জায়গায় সব দোকানেই তো বোতলের গায়ে লেখা থাকা মূল্যে (১৫ টাকা) বিক্রি হয়, আপনি যেসব খরচের কথা বললেন, নির্ধারিত এই সব খরচ তো সেসব দোকানেও হয়। তারপরও গায়ে লেখা থাকা মূ্ল্যে বিক্রি করেও তো লাভ করছে তারা। উপরন্তু বাহিরের দোকানগুলোকে বিভিন্ন (বেআইনি) চাঁদা দিতে হয় বলে আভিযোগ আছে, বইমেলা অঙ্গনেতো কাউকে চাঁদা দিতে হয় না।
এসব কথার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে ঢাকা দক্ষিণের যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে দোকানমালিক বলেন, মেলা তো ভাই, একমাসের ব্যাপার। আর দোকানকর্মী বললেন, ২০ টাকাই দাম। নিলে নেন, না নিলে নাই।
পাশের দোকান ‘নড়াইল শখের রান্নাঘর’ এ কোকাকোলার একটি ক্যান দেখিয়ে দাম জানতে চাইলে বলা হলো ৪০ টাকা। যদিও ক্যানের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা আছে ৩৫ টাকা। এখানেও গায়ে মূল্য ১৫ টাকা লেখা থাকা ‘কিনলে’ ব্রান্ডের এক বোতল পানির দাম বলল ২০ টাকা। বাড়তি দামের কারণ হিসেবে তাদেরও জবাব, মেলা উপলক্ষে শুধু আমরা না, সব দোকানেই এমন দাম। এই দোকানের পিঠাসহ সব খাবারের দামই অস্বাভাবিক বলে অভিযোগ করলেন ক্রেতারা।
পাশের দোকান ‘হাজীর বিরিয়ানী অ্যান্ড কস্তরী কাবাব ঘর’। এই দোকানের কর্মীরা জানালেন, এখানে চিকেন চাপ ১৮০ টাকা, ঝাল ফ্রাই ১৬০ টাকা, লুচি প্রতিটি ২০ টাকা, চটপটি ৬০ টাকা, হালিম ১০০ টাকা, ফুচকা ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এই দোকান এবং এর সামনের দোকান ‘ক্যাফে হাজী বিরিয়ানী অ্যান্ড কাবাব হাউজ’- এর ক্রেতারা বললেন, বইমেলার খাবার দোকানগুলোতে দাম রাখে অস্বাভাবিক, তার ওপর দাম অনুসারে খাবারের পরিমাণ/আকার খুবই কম /ছোট।
এমএ/আরএ/