বয়স ও বেতন কাঠামো বাড়াতে অনেক দিনের আন্দোলনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি
‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি’ তাদের প্রত্যেকের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার বয়স ৬২’ বছরের বাতিল করা সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করে সে বয়সসীমা পুর্ণনিধারণের দাবীতে আবেদন, নিবেদন করেও কোনো ফল না পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে আছেন।
তাদের বেতন স্কেল উন্নয়নের জন্যও তারা দাবী করে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যলয়টির কর্মকর্তাদের দাবী, সহকারী রেজিষ্ট্রারের মতো উচ্চতম পদে প্রারম্ভিক বেতন স্কেল হোক ৩৫ হাজার ৫শ টাকা থেকে ৬৭ হাজার ১০ টাকা, উপ-রেজিষ্ট্রার পদে প্রারম্ভিক বেতন স্কেলের সর্বোচ্চ সীমা হোক ৫০ হাজার টাকা। এভাবে অফিসার স্কেলের নিম্মতম পদগুলোতে বেতনকাঠামো পুর্ণবিন্যাস করা হোক।
তাদের আরেকটি দাবী হলো-কর্মঘন্টা ঠিক রাখতে হবে। আগের অফিস সময় আবার নিধারিত করে দিতে হবে। তাতে তারা আগের এক দিন ছুটি মেনে নেবেন।
শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন কর্মসূচি চলছে তাদের। কেননা, ছাত্র, ছাত্রীদের জন্য দাবী আদায়ে তারা মাঠে শ্লোগান দিতে পারেন না। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতি রাজপথে আন্দোলনের এমন কোনো রেওয়াজ তৈরি করেনি।
অধ্যাপকদের মতো মানববন্ধন করতে পারেন তবে সে চর্চাও তেমন নেই।
তারা কেবল সময় ধরে কর্মবিরতি করতে পারেন। ফলে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনটির ধারাবাহিকতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার তিন দিন আগে থেকে, পূর্ণদ্যমে কাজের শুরুর দিনগুলোতে শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি কার্যক্রম পালন করে চলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি ছাত্রছাত্রী ভর্তির মতো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তম কার্যক্রম চালু রাখতে ভতি কাযক্রম করছেন। ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরিক কার্যক্রম তারা পরিচালনা করে আসছেন।
এই কাজগুলোকে জরুরি সেবাদানকারী কার্যক্রম বলে আন্দোলনরত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি উল্লেখ করে চলমান রেখেছেন।
দিনের এই কাজগুলোর বাইরে অন্যান্য কাজে তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি পালন করে চলেছেন।
সভাপতি এটিএম এমদাদুল আলম ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কমকতা সমিতি’ অফিসে ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সালের বেলা ৩টায় একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তাতে সমিতির সদস্যদের অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এটিএম এমদাদুল আলম তার লিখিত বক্তব্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, যখনই আমরা আমাদের কোনো আন্দোলন শুরু করি, তখনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের দাবীগুলো বাস্তবায়ন করা হবে-এই মৌখিক আশ্বাস দিয়ে দেন। ফলে আমাদের অন্দোলন স্থগিত হয়ে যায়। বরাবরই তাই ঘটে।’
এরপর তিনি তাদের দাবীগুলোর কথা আবার জানিয়েছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি জানিয়েছেন এবার সহকর্মীদের নিয়ে দাবীগুলো আদায় ও বাস্তবায়ন না হওয়া পযন্ত আন্দোলন করে যাবেন।
লিখিত বক্তব্যে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি আবারও বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা আমাদের দাবীগুলো বাস্তবায়নের জন্য বহুবার মৌখিকভাবে জনে, জনে বলেছি। তারা আমাদের আগের মতোই এবারও দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কার্যকর করেননি।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি জানিয়েছেন, ‘আমাদের এই দাবীগুলো যৌক্তিক বলে এর আগে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূরণ করা হয়েছে। এটি আমাদের প্রশাসনও জানেন। তারা আমাদের ন্যায্য দাবীগুলোর সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছেন। তবে সেগুলো বাস্তবায়ন করছেন না। তাতে আমাদের ভোগান্তি ও কষ্ট বেড়ে চলেছে।’
এটিএম এমদাদুল আলম জানিয়েছেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কমকতা সমিতির দাবী করা ও অনেকদিন ধরে আন্দোলনে থাকা দাবীগুলো আংশিকভাবে পূরণের দিকে অগ্রসর হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের মধ্যে বঞ্চনা ও সমস্যা তৈরি করছেন। সবাইকে সেদিকে ঠেলে দিয়েছেন।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি জানিয়েছেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ও আইসিটি (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজি বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) সেলের প্রগ্রামার পদের বেতন স্কেল বাড়ানো হয়েছে। উন্নীত করা হয়েছে সবশের্ষ ৭ হাজার ১০ টাকার দশম গ্রেডে। এটি অত্যন্ত বেদনার।’
তারপরও সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কাজ করে চলেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র, ছাত্রী সাংবাদিকদের প্রায় সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে চলা অফিসার সমিতির পদাধিকারীরা তাদের মুখপাত্রের মাধ্যমে জানিয়েছেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ প্রতিশ্রুতি অনুসারে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভা-২৫৪’তে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার গ্রেডের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ অনুসারে যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, সেগুলো বর্তমান সরকারী কর্মকমিশনের জাতীয় বেতন কাঠামোর পরিপন্থী হয়ে গিয়েছে।
এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তটি বাতিলের জন্য দাবী জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি।
এরপর তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। তাতে সংবাদ সম্মেলনটি কাভার করা সাংবাদিকরা অংশ গ্রহণ করেছেন। আলোচনা করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি বা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সরকার মাসুম, সমিতির প্রচার-প্রকাশনা ও সাহিত্য সম্পাদক আবু হুরাইরা, দপ্তর সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ পাপ্পুসহ সকলে।
তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ও উপস্থিত ছিলেন চিরচেনা মুখগুলোর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, সাবেক সভাপতি শামসুল ইসলাম জোহা, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক রাশিদুজ্জামান খান টুটুল প্রমুখ। সমিতির অন্য নেতা ও সদস্যরা এই সময় উপস্থিত ছিলেন।
ওএস।