ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি জালিয়াতি, একজন আটক
লেখা ও ছবি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রায়হান মাহবুব
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন জালিয়াতকে আটক করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় চক্রের ভর্তি জালিয়াত চক্রের সদস্য বলে জানানো হয়েছে। তার নাম আতিক। তিনি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার রাণীনগর গ্রামের মো. আবু বক্করের ছেলে। তাকে ২৭ ফেব্রুয়ারি রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিসৌধ এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা গ্রেফতার করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আহনাফ মোর্শেদের সঙ্গে তিনি আড়াই লাখ টাকায় ভর্তি করে দিতে চুক্তি করেছেন বলে জানা গিয়েছে। সে ঠাকুরগাঁও জেলার গোবিন্দনগরের মোকাররম হোসেনের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন আহনাফ। এর আগে তিনি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন। সেখানে তার ফলাফল জানা যায়নি। তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে ভতি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় তার নামটি আসেনি। এরপর আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে তার কলেজের বন্ধু ফরহাদ হোসেন তাকে টাকা দিয়ে অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হতে পরামশ ও উৎসাহ দেন। তিনি তাকে তার পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই ইকবালের সাহায্য নিতে বলেন।
এরপর ফরহাদের পরামর্শে ইকবালের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি তাকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে ভর্তি করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। তাকে শৈলকূপা উপজেলার বরদা গ্রামের লাল চান নামের একজন ব্যক্তির সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করিয়ে দেন। লাল চান তাকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে বলেন। সেখানে তারা দেখা করেন ও আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি তাকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসসি) বিভাগে ভর্তি করে দেবেন বলে জানিয়ে দেন। তখন তার সঙ্গে আতিক ছিলেন। তারা এই সময় আহনাফের কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা নিয়ে ব্যাংক রশিদের মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংকের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় ৮ হাজার ১শ টাকা জমা দেন।
এই টাকা অ্যাকাউন্টসে জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের অফিসার পরাগ। তিনি আরো বলেছেন, চেকে কোনো স্বাক্ষর জালিয়াতি হয়নি। তবে আহনাফের একজন আত্মীয়ের পরিচিত এক লোক ব্যাংকের কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করেন। ব্যাংকের কর্মকর্তা আইন শৃংখলা বাহিনীকে জানান। তারা আহনাফকে দিয়ে ফোন করিয়ে টাকা দেবার প্রলোভনে আতিককে ডাকেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াত চক্রের সদস্যটিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিসৌধের সামনে থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। আতিকের কাছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বা উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে ভর্তির একটি ফরমও পাওয়া গিয়েছে। তারপর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে আলাপে আতিককে ডিবি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় সোপর্দ করে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, জালিয়াত চক্র রেজিস্ট্রার ও উপ-রেজিস্ট্রার (শিক্ষা)’র স্বাক্ষর জাল করেছে ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষাথীদের ভর্তির একটি ভুয়া তালিকা তৈরি করেছে। তবে দপ্তরটি সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে, কোনো তালিকাই কাউকে দেওয়া হয় না। এমন তালিকা নেই। পুলিশকে তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে লাল চান ও রাকিবের নাম বলেছে আতিক। তাদের নির্দেশে সে আহনাফের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে বলেছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, ‘জালিয়াত চক্রের ওই সদস্যকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার অফিসার ইন-চার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী আহনাফ মোর্শেদ বাদী হয়ে তার থানায় মামলা করেছে। আজ সোমবার গ্রেফতার করা আতিককে আদালতে হাজির করা হবে বলেছেন তিনি গতকাল।
মামলাটির বাদী ও জালিয়াত চক্রের জালিয়াতির শিকার আহনাফ মোর্শেদ এই প্রতিবেদককে বলেছে, ‘একজন পরিচিতের মাধ্যমে লাল চানের সঙ্গে আড়াই লাখ টাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসসি বিভাগে ভর্তির চুক্তি হয়েছিল। ১৮ হাজার টাকা দিয়েও দিয়েছি। আমার বাবা বাধা দেওয়ায় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত বুঝতে পেরে ক্যাম্পাসের পরিচিত একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে তাদের একজনকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি।’
ওএস।