‘ধর্ষণের ঘটনাটি প্রথম হলেও এটিই শেষ হবে’
ছাত্রীর সঙ্গে গভীর রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানায় গিয়ে বসে থেকে মামলা দায়ের করেছেন বাদী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান। এরপর সেদিন ভোরেই ছাত্র, ছাত্রীদের সঙ্গে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন গোপালগঞ্জের একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। শেখ হাসিনার জন্মভূমিতে, তার বাবার বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে গণধর্ষণের তীব্র প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কিউ. এম. মাহবুবকে নিয়ে এই মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের সবার ওপর লাঠি ও ইট নিয়ে হামলা করলে ছাত্রীদের বাঁচাতে গিয়ে, ছাত্রদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে এবং নিজেরা সরে পড়তে গিয়ে আহত হয়েছেন অনেক শিক্ষক। ভিসি স্যার পায়ে আঘাত পেয়েছেন। বাংলাদেশের অন্যতম কৃতবিদ্য অধ্যাপক, যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ মানুষটিকে হামলার ঘটনাও নজিরবিহীন।
একজন নিরীহ ছাত্রীকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং তাকে গণধর্ষণের ধারাবাহিক প্রতিবাদে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’ তুমুল প্রতিক্ষিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
আজ শনিবার ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে গোপালগঞ্জের বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান ফটকের সামনে অন্তত ৩০ জন বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক এই মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন।
ঢাকা প্রকাশের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সফিকুল আহসান ইমন জানিয়েছেন, মহাসড়কের এক পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কিউ. এম. মাহবুরের হাতে ধরা ব্যানারে লেখা ছিল-“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ’র শিক্ষাথীকে গণধর্ষণের মতো জঘন্যতম ঘটনার প্রতিবাদ, দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার, শিক্ষক-শিক্ষাথীদের শান্তিপূণ আন্দোলনে হামলা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন-শিক্ষক সমিতি, শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।”
মানববন্ধনে অন্যতম ছিলেন মামলার বাদী প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান, প্রতিবাদী বিবৃতি প্রদান করা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামান, সহ-সভাপতি মো. রাশেদুজ্জামান পবিত্র, প্রচার সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধনের পর আলোচনায় সমিতির সভাপতি ড. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সবাই জানি ধর্ষণ জঘন্যতম অপরাধ। এমন অপরাধের সুষ্ঠু বিচার না হলে পূনরাবৃত্তি স্বাভাবিক। ফলে আমরা শিক্ষকরা সবাই আমাদের ছাত্রীকে গণধর্ষণের দোষীদের সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
গণধর্ষণ মামলার বাদী প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেছেন, ‘আমিসহ আমরা অধ্যাপকরা সবাই এই অনাকাংখিত ও চরম অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যেসব ছাত্র, ছাত্রী ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন, তাদের দ্রুত আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর মহোদয়।
ভিসি স্যার অধ্যাপক ড. এ.কিউ.এম. মাহবুব শিক্ষক সমিতির মানববন্ধনে বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ধর্ষকদের বিচার না হচ্ছে, আমরা আমাদের অন্দোলনের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাব। আমরা সবাই এই জঘন্যতম ঘটনা ও আমাদের ছাত্র, ছাত্রীসহ শিক্ষকদের ওপর হামলার সঠিক বিচার দাবী করি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থানের পূণ্যভূমিতে এমন ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’
তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনাটি প্রথম হলেও এটিই শেষ হবে বলে আমরা আশা করি।’
অধ্যাপক ড. এ. কিউ.এম মাহবুব জানিয়েছেন, ‘আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠু বিচার পাব।’
ওএস।