বঙ্গোপসাগর ঝুঁকিপূর্ণ হবার পেছনে চট্টগ্রাম শহর ও বন্দরের অনেক প্রভাব আছে
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ১৪ ফেব্রুয়ারিতেও কাজ করেছেন তারা। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ সবাই। বাংলাদেশের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, জাপানের বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, অষ্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত জেরেমি ব্রুয়ের; বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, আইইউবি (ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনির্ভাসিটি, বাংলাদেশ)’র উপাচার্য ড. তানভীর হাসান, জাপানের ‘দি সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশন (এসপিএফ)’র প্রেসিডেন্ট ড. আতসুশি সুনামি, ‘দি ওশান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ওপরি)’-জাপানের পরিচালক ড. তমোনারি আকামাতসু এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম।
তারা এসেছিলেন অনলাইনে আইইউবিতে। হয়েছিল একটি বিশেষ সেমিনার। আইইউবি’র ‘সেন্টার ফর বে অব বেঙ্গল স্টাডিজ’র অধ্যাপক-গবেষক, বিভিন্ন বিষয়-পরিবেশ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ব্যবসায়সহ নানা বিভাগের আগ্রহী অধ্যাপক ও ছাত্র, ছাত্রীরা এসেছেন এবং যুক্ত হয়েছেন অনলাইনে।
রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আইইউবির স্থায়ী ক্যাম্পাসে আয়োজিত সেমিনারটির শিরোনাম ছিল, ‘অ্যাসেসিং রিস্কস ইন দি সিটি অব চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ ইউজিং দি ক্লাইমেট অ্যান্ড ওশান রিস্ক ভালনারেবিলিটি ইনডেক্স-করভি’। বাংলায়, ‘চট্টগ্রাম শহরের ঝুঁকিগুলো মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জলবায়ু ও সাগরের ঝুঁকিপূর্ণ হবার কারণগুলোর সূচক-করভি।’ ‘করভি’ নামের পূণ রূপ, ‘দি ওশান রিক্স অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি ইনডেক্স’; বাংলায়, ‘জলবায়ু ও সাগরের দুর্বলতা এবং ঝুঁকিগুলোর সূচক।’
এই প্রকল্পটি ‘করভি’ নামে আইইউবি, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে পরিচিত। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘করভি বাংলাদেশ’ অধ্যায় তৈরিতে তাদের নিয়ে কাজ করছে আইইউবি। তাদের ‘স্কুল অব বিজনেজ অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিউরশিপ’র অর্থনীতি বিভাগ গবেষণার মূল সহযোগি। যৌথভাবে তৈরি করছে জাপানের ‘দি সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশন (এসপিএফ)’ ও ‘দি ওশান পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউট (ওপরি)’র সঙ্গে। প্রকল্পের শুরু ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর। এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অত্যন্ত মানসম্পন্ন গবেষণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের এই সাগরের আশপাশের উপকূলীয় এলাকার জলবায়ু, পরিবেশ ও সামাজিক এবং অথনৈতিক অবস্থাগুলোর দুবলতা ও আশপাশের বিপর্যয়গুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরে ব্যবস্থাপনা করতে গবেষণামূলক কাজ করছেন তারা সবাই।
করভি’ সেমিনারটি আয়োজন করেছে তিনটি মূল প্রতিষ্ঠান-আইইউবি, এসপিএফ ও ওপরি।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন সেমিনারে সবাইকে স্বাগত জানিয়েছে আইইউবি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “সারাবিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছে। তবে অত্যন্ত ঝুুঁকিতে আছে আমাদের বাংলাদেশ। আমরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় বৈশ্বিক সহযোগিতার বিকল্প নেই। এজন্য ‘দি ওশান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ ও ‘দি সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশন’র সঙ্গে যৌথভাবে আমাদের ‘করভি’ প্রকল্প সম্পন্ন করছি।”
অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান জানিয়েছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় কার্যকর অবদান রাখতে আমাদের ধারাবাহিক দৃঢ় প্রত্যয়ের বহি:প্রকাশ আজকের অনলাইন সেমিনার।’
‘চট্টগ্রাম শহরের ঝুঁকিগুলো মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জলবায়ু ও সমুদ্রের ঝুঁকিপূণ হবার কারণগুলোর সূচক’ আলোচনায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘সরকারের ২০৪১ সালের মহাপরিকল্পনায় আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে বাংলাদেশের শহরগুলোকে বন্যামুক্ত করার দিকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে। আমাদের মহাপরিকল্পনার একটি বড় অংশ চট্টগ্রাম। তার কারণ আমরা জানি, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম বাংলাদেশে বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার। সেখানে এই কাজ তো করা হবেই। তাতে শহর বাঁচবে।’ তিনি এরপর চট্টগ্রাম শহরের ঝুঁকিগুলো মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জলবায়ু ও সমুদ্রের ঝুঁকিপূণ হবার কারণগুলো নিয়ে আলোচনা ও সমাধানে গিয়েছেন।
অনলাইনে যুক্ত হয়ে জাপান ও বাংলাদেশের এই যৌথ গবেষণা কার্যক্রমে বক্তব্য প্রদান করেছেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি।
আলোচনা করেছেন অন্যতম অতিথি, বাংলাদেশের সহযোগি দেশ অষ্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত জেরেমি ব্রুয়ার।
এসপিএফ’র প্রেসিডেন্ট ড. আতসুশি সুনামি এবং ওপরি’র পরিচালক ড. তমোনারি আকামাতসু অনলাইনে আলোচনায় করেছেন।
এখানে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দান করেছেন, সরকারের উদ্যোগগুলো জানিয়েছেন আরেক অতিথি-বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন।
বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহি কমকতা মোহাম্মদ শহীদুল আলম তার শহরকে নিয়ে গবেষণা করায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি নিজেদের সীমাবদ্ধতা, উদ্যোগ ও করণীয় বলেছেন।
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূণ অনলাইন সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন করভি’র গবেষণা দলের প্রধান এবং আইইউবির ‘সেন্টার ফর বে অব বেঙ্গল স্টাডিজ’র উপ-পরিচালক ড. এমাদুল ইসলাম। বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে আমাদের গবেষণা ও মূল্যায়নে যেসব তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে, সেগুলো নীতিনির্ধারক ও সাগরাঞ্চলের মানুষ, সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী-সবার জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কেবল আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, সারা বিশ্বের যে রাষ্ট্রগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নির্ভরশীল; তাদের দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে ও উন্নয়ন করতে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অসীম।’
এরপর গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ওপরি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মিকো মাইকাওয়া আলোচনা করেছেন।
তাদের আলোচনায় জানা গিয়েছে, বঙ্গোপসাগর ঝুঁকিপূর্ণ হবার পেছনে চট্টগ্রাম শহর ও বন্দরের অনেক প্রভাব আছে।
ওএস।