ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়ে হলুদ!
আমাদের বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাগুন বিশ্বজুড়ে ভালোবাসার দিন। বাংলাদেশের সবখানে তাই ভালোবাসার জয়গান হয়েছে। হাতে, হাত রেখে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। ‘হ্যাপি ভ্যালেনটাইনস ডে’তে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হলো বিয়ের গায়ে হলুদ। অন্যরকম গল্পটি লিখেছেন ও ছবি তুলেছেন রায়হান মাহবুব
চমকে যেতে হলো আমাকেও। সারাদিন খবরের খোঁজে; নানা ঝুট, ঝামেলার গন্ধে ক্লাস আর আড্ডার ভীড়ে ঘুরে বেড়াই আমাদের ক্যাম্পাসে। তবে দিনের বেলা, শীতের মধ্যে আমাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিয়ের স্টেজ তো কোনোদিন দেখিনি। কাছে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ। হলুদ শাড়ি পরা কটি মেয়ের আশেপাশে বেড়াচ্ছেন তেমনই পাঞ্জাবি পরা কটি তরুণ। আসলে তারা আমাদের বড় ভাই, বোন। দলবেঁধে বরাবরের মতো আড্ডা জমিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আড্ডার টান কী আর ভোলা যায় কোনোদিন? তাও আবার প্রিয় ক্যাম্পাসে? ইচ্ছেমতো জায়গায়? এরপর সাহসে বুক বেঁধে, কৌতুহল থামাতে না পেরে আরো সামনে গেলাম। সত্যিই একটি একটি স্টেজ। তাতে লেখা ‘গায়ে হলুদের ছোঁয়া’। সেখানে একটি অনিন্দ্য সুন্দরী তরুণী হাসিমুখে বসে আছেন। তার গালে হলুদ দিচ্ছেন সহপাঠী বান্ধবীরা। ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস-২০২২’র ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের নিয়ে নিজের বিয়ের অনুষ্ঠান করে সবাইকে চমকে গিয়েছেন যে মানুষটি, তিনি আমাদের ফাইনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিংয়ের ২০১৯-২০২০’র এমবিএর ছাত্রী। নাম হলো আপার-সুরাইয়া ইয়াসমিন (রিয়া)।
প্রিয় ক্যাম্পাসে ভালোবাসার ভুবনে নিজের গায়ে হলুদের আয়োজনটি তিনি করছেন অনেক আবেগে। গায়ে হলুদের ছোঁয়া নামের অনুষ্ঠানটিতে কী নেই? রীতি অনুসারে আলাদা প্লেটে ফুলের আয়োজন আছে কটি ধরণের, পুডিং বানিয়ে এনেছেন তার বন্ধুরা। কেক আছে লেখা তার নাম ও গায়ে হলুদ লিখে দেওয়া, নববধুর সামনে একে, একে এসে বন্ধুরা আলাপ ও খাইয়ে দেওয়ার কাজগুলো নিয়মনিষ্ঠভাবে করে চলেছেন। তারা বিয়ের প্যান্ডেলটির আশপাশে চেয়ার সাজিয়ে আড্ডা ও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছেন।
কম দামের ভালো খাবারের জন্য বিখ্যাত বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফলে বিয়ের কনে পক্ষের খাওয়া নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। ঝগড়া, ফ্যাসাদ, অপমানেরও কোনো সুযোগ নেই। নিত্য এই গল্পের ব্যতয় ঘড়িয়েছেন তারা সবাই মিলে। গড়েছেন ইতিহাস। প্রিয় বান্ধবীকে পায়েস আবার কেক খাওয়াতে কোনো বিরাম নেই। নিজেদের খেতেও নেই মানা কোনো। নারী জীবনের এই অন্য গল্পে খুনসুটিতে তারা আছেন মেতে। এখানে, সেখানে কজনের আড্ডা বসেছে। তারা মোটে অল্প।
গান বাজছে, নাচ হচ্ছে মেয়েদের। ভালোবাসা দিবসে বন্ধুর জন্য চিরকালীন এই ভালোবাসার প্রকাশ আমাদের ফেইসবুকের ছবি হলো। মুগ্ধ হয়ে গেলেন বেড়াতে ও ভালোবাসা করতে আসা; প্রিয়তম ক্যাম্পাসের ভালোবাসায় বন্দী চিরকালের সুখ, দুঃখের সাথীগুলো। কেন এই আয়োজন? ‘আমরা সবাই তো রিয়ার বিয়েতে থাকতে পারবো না। যেতে পারবো না কাজে, অকাজে; ফলে এখানেই আমাদের অনুষ্ঠানটি হয়ে যাচ্ছে। আসলে আমাদের সবার ভালোবাসার বন্ধন এই ভ্যালেন্টাইনের বিয়ের অনুষ্ঠান।’
জানা গেল কনের কাছে, আপার বিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ঠিক চার দিন পরে। পারিবারিক মতে, বিয়ে হচ্ছে সুরাইয়া ইসলাম রিয়ার। তবে তার বন্ধুরা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুনে বিয়ের অনুষ্ঠান করছেন তাদের মতো করে, নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই আসরে মুখ খুললেন তার আশপাশের মানুষ। শাপলা খাতুন বললেন, ‘ও আমার একটি খুব ভালো বন্ধু। আমরা সবাই রিয়াকে ভালোবাসি। ফলে পহেলা ফাগুন ও ভালোবাসা দিবসে আমাদের বন্ধুত্বের ভালোবাসাকে স্মরণীয় করার সুযোগটি নিয়ে ক্যাম্পাসে হায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটি করছি।’ কনে বলেছেন, ‘কুষ্টিয়া শহর থেকে ক্যাম্পাসের ভেতরে আমার বিয়ের গায়ে হলুদ-কল্পনাতেও আসেনি কোনোদিন। আমার ক্লাসমেটদের জন্য, তাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ।’ শিক্ষকরাও তাদের আয়োজনে খুশি হয়েছেন।
ওএস।