‘গুপ্তপ্রেমিক সাবধান, সামনে আসছে নওজোয়ান’,
লেখা ও ছবি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সবচেয়ে বড় উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেমিকের মন পাননি অনেক ছাত্র, ছাত্রী। ছাত্রীরা সেসব কথা প্রকাশ্যে বলতে পিছিয়ে আছেন বরাবরের মতো। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’, ‘মনের কথা বাইরে জানালে মান-সম্মানের হানি হবে’ ইত্যাকার ভাবনা ঘুরে বেড়ায় তাদের মেয়ে মহলে। তবে ছেলেদের প্রেমের প্রস্তাব ও ভালোবাসার জন্য সংগ্রাম জগৎ বিখ্যাত। শাহজাহান-মমতাজ মহল, শিরি-ফরহাদের ইতিহাসবিখ্যাত কাহিনীগুলো আজও প্রেরণাময়। তাই বন্ধুদের নিয়ে নানাভাবে প্রেমের চেষ্টা করে, মনের সঙ্গে মন পেতে গিয়ে হেরে গিয়েছেন-ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও হলের ছাত্ররা মিলে গড়ে তুলেছেন একটি মনহীন সমিতি।
সহপাঠীনিদের বিপক্ষে গড়া তাদের এই সমিতির নাম ‘প্রেম-বঞ্চিত সংঘ’। এবার সবার সামনে এসেছেন তারা। বিভিন্ন দিবসে শিক্ষকরা যেমন ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা করেন, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলো করে মিছিল, সমাবেশ; তেমনি কুষ্টিয়ার ইবি’র সংঘটি বিক্ষোভ ও প্রতিবাদী মিছিল করেছে। তাদের এই বিক্ষোভ ভালোবাসা না পাওয়ায়, প্রেম না হওয়ায়। সেখানকার প্রতিবাদগুলো মনহীন তরুণীদের বিপক্ষে। অন্তত ২২ জন ছাত্র প্রেম পেতে পঞ্চমুখ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন সড়কসহ প্রায় পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে ফেলেন।
দুজন আবার সামনের সারিতে গলায় প্রেমের ও বিয়ের মালা পরে বেড়িয়েছেন। তাদের শ্লোগানগুলোও আগ্রহ জাগানোর মতো, অনেক ভালোবাসায় তৈরি। তারা উচ্চকন্ঠে চিৎকার করে বলেছেন অনেক বেদনা নিয়ে, খুব দুঃখ সয়ে-‘ভালোবাসা কেউ পাবে আর কেউ পাবে না; তা হবে না, তা হবে না’, যারা লেখাপড়ায় ব্যস্ত থাকেন এমন মেয়েদের তারা হুশিয়ার সাবধান করেছেন-‘নষ্ট প্রেমের খাতাতে, আগুন জ্বালাও একসাথে’, নিজেদের প্রেমিকার সঙ্গে গোপনে যেসব বন্ধু, সহপাঠী ভালোবাসা ও ভালোবাসার অভিনয় করে যাচ্ছেন তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন তারা-‘গুপ্তপ্রেমিক সাবধান, সামনে আসছে নওজেয়ান’, আর তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সঙ্গে গোপনে মোবাইলে সরলতার সুযোগ নিয়ে খারাপ আচরণ করছেন যেসব ছেলে তাদের ভয় দেখিয়েছেন-‘প্রেমের নামে লুচ্চামি, চলবে না চলবে না।’ আসলে প্রেমের ব্যর্থতায়, প্রেম হারানোর বেদনায় তাদের মনগুলো দুঃখে কাতর হয়ে না বলা কথাগুলোও হঠাৎ বলে দিয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে।
এই দিন কারই বা মাথা ঠিক থাকে? ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ভালোবাসা দিবস পালিত হচ্ছে মহাসমারোহে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশের আনাচ, কানাচ ফুলের সৌরভে ভরে উঠেছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবখানে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে হাতে হাত রেখে, স্মার্ট ফোনে যুগল ও একা ছবি তুলে, রিকশায় বেড়িয়ে, ফুচকা, আইসক্রিম খেয়ে হলুদ-সাদা; নানা রঙের পোশাকে বেড়াচ্ছেন তরুণ-তরুণীদের দল। ফলে মন খারাপ তো তাদের হবেই। কজনের নাম জানা গিয়েছে। তারা বলেছেন-ইশতিয়াক, সিয়াম, তালুকদার মোহাম্মদ সোলায়মান, হাসিব, কামাল ও সৌরভ। সামনের সারির এই মানুষগুলো প্রেম-বঞ্চিত সংঘের করোনা ভাইরাসের আক্রমণে বন্ধু ক্যাম্পাসে যাদের পেয়েছেন, সবাইকে ভালোবাসা দিবসে পাঞ্জাবি, পাজামা পরিয়ে নিয়ে এসেছেন হলের ও আশপাশের বাইরে।
সবাই মিলে দফায়, দফায়; বিরতি দিয়ে বেড়িয়েছেন ক্যাম্পাসে। খেয়েছেন চা, করেছেন পেট পূজা। তাদের তো আর দেখাশোনার কেউ নেই। খবর নেওয়ার মানুষটি যে দূরে সরে যাচ্ছেন ধীরে, ধীরে। ফলে দুঃখে তারা শ্লোগানে মুখর করে দিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। শুরু করেছিলেন বিকেলে। সারাদিন মন পেতে ব্যস্ত থেকেছেন, মোবাইল ওপাশ থেকে সাড়া দেয়নি। আবার অন্যদের ভালোবাসা করার দুঃখে মনটি ভেঙে গিয়েছে। ফলে চারটার আগে মিছিল শুরুর উপায় ছিল না। সন্ধ্য নামার আগে ফিরেছেন আড্ডার গন্তব্যে। এর মাঝে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান সড়কের মোড় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা হয়েছে প্রেম-বঞ্চিত সংঘের, ভালোবাসার জন্য বিখ্যাত, দেখাসাক্ষাতের সুন্দর সড়কের কোনোটিই বাদ যায়নি চিরচেনা ছেলেদের মিছিল ও বেদনা প্রকাশের হাত থেকে। কুয়াশা ঘেরা ক্যাম্পাস, হিমেল বাতাসে তাদের সহযাত্রী হয়েছে।
ওএস।