বেসরকারিতে পড়েও বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষক হলেন ববি উপাচার্যের মেয়ে
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের মেয়ে অহনা আরেফিন। নাটোরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করেছেন তিনি। পার্টটাইম লেকচারার হিসেবে শিক্ষকতাও করেছেন আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া তিনি শিক্ষা ও গবেষণা সহকারী হিসেবে ছিলেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷
এবার তিনি প্রভাষক পদে নিয়োগ পেলেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৷
অভিযোগ রয়েছে, ববি উপাচার্যের মেয়ে বলেই তাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ কমিটি।
গত শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারী ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগের ৩ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে অহনা আরেফিন এ নিয়োগ পান।
এ ব্যাপারে নিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ‘আইনে বলা হয়েছে সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পাশকৃত শিক্ষার্থী নেওয়া যাবে৷ কোথাও বলা নেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া যাবে না। ভালো ক্যাম্পাসে পড়লেই যে শিক্ষার্থী ভালো হবে এমন তো কোনো কথা নেই৷ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যদি ভাইভা বোর্ডে ভালো করতে পারে তাহলে তিনি তো নিয়োগ পেতেই পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেকশন বোর্ডে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক, রিজাইন বোর্ড কর্তৃক নিয়োগকৃত উচ্চপর্যায়ের লোকজনরা আছেন৷ তারা যেটা ভালো মনে করেছেন সেভাবে সিলেকশন করেছেন।’
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত অহনা আরেফিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়ে কি না জানতে চাইলে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, ‘তিনি যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সন্তান হতেই পারেন তাই বলে কি তিনি মানুষ নয়৷ তার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মতো যোগ্যতা আছে কি না সেটা পরীক্ষা করে তারপর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৷ এখানে যদি আমার সন্তান হতো তাহলে আমি নিয়োগ বোর্ডের থাকতে পারতাম না আপনারা আইন বিবেচনা করে দেখবেন আইনে কোথাও কোনো উপাচার্যের সন্তানকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নিষেধ করা নেই।’
প্রভাষক পদে আবেদনকারী প্রার্থী রুয়েট শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলীকে ভাইবা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমাদের ভাইবা অনেক ভালো হয়েছিল ৷ আমরা রুয়েট বাদেও বুয়েটের এক ভাই এখানে ভাইবা দিয়েছিলেন৷ এত ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা থাকতেও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া দুঃখজনক ৷ নিয়োগ বোর্ড কসের উপর প্রাধান্য দিয়েছে সেটা তারাই ভাল বলতে পারবেন ৷’
এদিকে রিজেন্ট বোর্ডের কার্যবিবরণী স্বাক্ষর হওয়ার পূর্বেই রেজিস্ট্রার কর্তৃক নিয়োগপত্র পেয়ে সে তার কর্মস্থলে যোগদান করেছেন বলে জানা যায়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ মুরাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা উপাচার্য স্যার আলাদা ভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। তবে নিয়োগের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি৷
এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামানকে জানতে চাইলে তিনি নিয়োগের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ বিষয়টা সম্পূর্ন প্রশাসনের ব্যাপার বলে জানান তিনি৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষক নিয়োগে যেখানে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাচ্ছে না সেখানে বুয়েট, কুয়েট বা রুয়েট এর মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদ দিয়ে তৃতীয়/চতুর্থ ক্যাটাগরীর কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কোনো শিক্ষার্থীকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক দেওয়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য লজ্জাজনক, এখানে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অশুভ লক্ষণ। তবে এখানে শুধু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কিংবা প্রভাবশালী কারও খুঁটির জোরেই এমনটি হতে পারে। কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আমাদের ধারণা একদমই অপ্রীতিকর। আবার কোন কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট বিক্রি করে থাকে। এটা দেখে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা চরম হতাশাজনক।’
এদিকে ববি উপাচার্যের মেয়ের নিয়োগ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়৷ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া নিয়ে তর্ক-বিতর্কের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়া যায় অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্ড মেডেলিস্টরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়।’
আরেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আহা! কি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সম্প্রদায়! কেউ আত্মীয়বান্ধব আবার কেউ সহকর্মী বান্ধব। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতে হলে এখন ভিসিদের আত্মীয় স্বজন হওয়া ছাড়া উপায় নেই।’
অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা থাকলেও তাদের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করা হয় না ৷ তবে এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব ৷
এমএমএ/