নানা রঙের ফুল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে
ফুলের বাগানের শুরু হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে। তারপর থেকে ক্যাম্পাসটির এখানে-সেখানে, পুরোটা জুড়ে ফুটে আছে নানা রঙ ও বাহারের ফুল। গাছগুলোই বাড়িয়েছে শোভা। কুষ্টিয়ার সবচেয়ে বড় ও একমাত্র সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়-ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুল বাগানের শোভা দেখতে আসছেন কত, শত; বেড়ানোর মানুষও। বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকদের মন জুড়িয়ে যাচ্ছে বাগানগুলো। তাদের মেয়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন, নানা ধরণের ফুলের কাছে গিয়ে ঘ্রান নিচ্ছেন; যত্ন করছেন, সেলফিও তুলছেন। ছাত্ররা ঘুরে, ঘুরে বাগান ও ফুল গাছগুলোর শোভা দেখছেন। মায়ায় ভরা ফুলের রাজ্যটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সবচেয়ে বড় ও উচ্চতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বাড়িয়ে তুলছে। আমরা যারা এই ক্যাম্পাসের ছাত্র; জানি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আসলে প্রকৃতির এক স্বর্গরাজ্য। বাংলার সবুজ শ্যামল শোভাকে বুকে নিয়ে,
তার প্রতি আরো ভালোবাসা জাগিয়ে তুলছে ক্ষণে, ক্ষণে। আমাদের এখানে নানা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসার ছাত্র, ছাত্রীরা; বাউলরা বেড়াতে আসে। আসেন কত প্রেমিক প্রেমিকা; নবদম্পতি ও বয়স্ক পরিবার। সবার কাছে চেনা সে পড়ার বাইরের এই ভুবনের কল্যাণেও। আসলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশান্তি ছড়িয়ে দিতে, মানুষের জীবন বাঁচিয়ে রাখা গাছের প্রতি অঙ্গীকার থেকে এই বাহারি ফুলের নানা জাতের গাছগুলোকে রোপন করা হয়েছে। ইট-পাথরের ভবনে পড়তে হয় আধুনিকতা মেনে। তেমন নিয়ম মেনে তৈরি ভবনগুলোর নানা জায়গায়, আশপাশ ও উন্মুক্ত স্থানে আছে ফুলের গাছের সারি।
কত রঙ তাদের। সাদা, লাল, হলুদ, নীল, হলুদ! আর কত বাহারে চোখ ও মন জুড়িয়ে চলেছে ওরা দিবারাত্র। আমরা গ্রামের ছেলে; শহরের ছেলেও আছেন অনেক; আবার দেশ-বিদেশের ছাত্র-ছাত্রীর কোনো বিরাম নেই পড়ালেখায় এখানে আসতে। শিক্ষকরা বলেছেন, আমাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটে আছে গোলাপ, রঙ্গন, গাঁদা, ডালিয়া, জিনিয়া, জারবিরা, জবা, হাসনা হেনা, বেলী, নয়নফুল, চন্দ্রমল্লিকা, ফায়ার বল, পানচেটিয়া, একজিরা, জালিয়া, মোরগঝুঁটি, কসমস, জুঁই, চামেলী, টগর, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, বকুল, ক্রিসমাস, পাতাবাহারসহ আসলে অসংখ্য জাতের ফুল। এবার বলি কটি নিদিষ্ট ঠিকানা-ফুলরাজ্য দেখতে হলে চলে আসতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে, আরো আসতে পারেন-সততা ফোয়ারা ও শহীদ মিনারের পাশে, ভিসির বাংলো, ডায়না চত্বর, প্যারাডাইস রোড, প্রশাসন ভবন এলাকা, লেকের আশপাশে, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবনের পাশে। যেতে পারেন ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক হল-ভবনগুলোতে। সবগুলো প্রাঙ্গণ জুড়ে মেলা বসিয়েছে ওরা ভালোবাসা ও সহমর্মিতার।
ঘুরতে গেলে আমাদেরও নজর কেড়ে নেয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস এলাকার মনমাতানো ফুল রাজ্য। অফিসটির ফুল বাগানে সারাবছর নানা জাতের ফুলেরা ফুটে থাকে বলে জানি। আশ্চর্য হলেও সত্য, একটি গোলাপের গাছে সাতটি রঙের ফুল ফুটে আছে। ফুটিয়েছেন কোন ফুলপ্রেমী শিক্ষক? কয়েকটি রঙে গাছে, গাছে ফুটে থাকা ডালিয়া বিমোহিত করে চলে সারাক্ষণ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী আলীমুজ্জামান টুটুল তার অফিসের সামনে নানা রকমের ফুলের চাষ দেখাশোনা করে চলেছেন অনেক দিন হলো। ফুলপ্রেমী বলেছেন আলাপে, ‘আপনারা যেকোনো মানুষ আমার অফিসের সামনে এলে সারাবছর দেখার মতো কটি জাতের ফুলের দেখা পাবেন। এই শীতের ফুলগুলোর জন্য আমরা গেল বছরের অক্টোবর থেকে কাজে নেমেছি। বাগানে ভালোবাসা বয়ে আনছি। তাতে কোনো কষ্ট হয় না, ফুল দেখতে ও চাষ করতে কোনো কষ্ট হয় না। কেবল একজনের কোনো খাটুনি নেই। আর অন্যজনের শ্রম আছে-দুটোই ভালোবাসাময়।’
প্রকৌশলী আলীমুজ্জামান টুটুল জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আছে প্রায় ৫০টি জাতের ফুলের বাগান। তার ইচ্ছে, আরো বাড়ানো হবে বিভাগ, অনুষদ ও স্থাপনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুলের বাগান। তিনি ও তারা নতুন, নতুন আরো অনেক জাতের ফুল চাষ ও তাদের শোভা বাড়াবেন সবার জন্যই। শ্রমে, ঘামে বানানো ফুলে, ফুলে সাজানো গ্রাম, আধা শহরের উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছবিতে আাঁকা শিল্পীদের তুলিগুলো আঁচড় বুনে চলছে। বন্ধ ক্যাম্পাসেও প্রতিদিন সুশোভিত, অনাবিল ও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে ঘুরতে আসছেন নানা জায়গার দর্শনার্থী, ফুলপ্রেমীরা। এই সৌন্দর্যে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করার লোভ সামলাতে কখনোই পারেননি তারা কেউ। নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী ও আনসার বাহিনী এবং ছাত্র-শিক্ষকের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন বাগানে।
যশোর থেকে এসেছেন দর্শনার্থী সাকিব হোসেন, “শাহজাদপুরের ‘রবীন্দ্র কুঠি বাড়ি’ বেড়াতে আমার ভালো লাগে। সেখানে গেলেই এখানে আসতে মন টানে। তাই চলে আসি বারবার। জানি-শীতে ফোটা ফুলদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে সুন্দরতম লাগছে।” আমাদের ইলেক্ট্রট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই)’র ছাত্রী আনিছা রহমান বলেছেন ‘ফুলের চাদরে মোড়ানো আমাদের ক্যাম্পাসটি মায়াবী রূপ নিয়ে নিয়েছে। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখে দারুণ মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। সারা বছর যেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা ফুটে থাকতে পারে-এই কামনা।’
আবাসিক হলের কথা বললাম, কটির কথা জানালাম না, যেখানে ফুটে আছে সারি সারি ফুলেরা-‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল’, ‘শেখ রাসেল হল’ ও ‘বেগম খালেদা জিয়া হল’। খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল জানিয়েছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার মনকে প্রস্ফুটিত করতে ফুলগুলো সাহায্য করে যাবে। এখানে আমরা আটটি জাতের ফুলের বাগান করেছি। গেলেই মনে ভালো লাগে।’
ওএস।