বদলে যাচ্ছে ঢাবির কলা অনুষদের শিক্ষাক্রম
বদলে যাচ্ছে ঢাবির কলা অনুষদের শিক্ষাক্রম। সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে কলা অনুষদে। চিন্তা-চেতনা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে নেতৃত্ব দেয় অনুষদটি। তবে কলা অনুষদের মানবণ্টনে চাকরির অনুপযুক্ততার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এজন্য এই অনুষদের কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বেশ কিছু পরিবর্তন আনার প্রস্তাবও করা হয়েছে ইতোমধ্যে।
জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে অনুষদের প্রতিটি বিভাগে বিভাগের মূল বিষয়ের পাশাপাশি অন্তত ৩০ শতাংশ কোর্স সাধারণ শিক্ষার (জেনারেল এডুকেশন) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সব বিভাগের জন্য বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) কোর্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নতুন কারিকুলামে মানবণ্টন ও মূল্যায়নে আসতে পারে ব্যাপক পরিবর্তন। সর্বমোট ১০০ শতাংশ নম্বরের কোর্স চূড়ান্ত পরীক্ষা বা ফাইনাল এক্সামে থাকবে ৫০% নম্বর। একটির স্থলে দুটি মিডটার্ম পরীক্ষায় ১০% করে মোট ২০%। উপস্থিতি ক্লাস পারফরমেন্সের জন্য থাকতে পারে ১০%। নতুন করে যুক্ত হতে পারে কুইজ ও প্রেজেন্টশন বা অ্যাসাইনমেন্ট। এতেও ১০% করে মোট ২০% নম্বর বরাদ্দ থাকবে।
গত মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমের সাথে এক সাক্ষাৎকারে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ দিতে চাই। এ জন্য বিভাগের মেজর কোর্সের বাইরে অন্তত ছয়টি জেনারেল এডুকেশন (GED) কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব কোর্স মূল বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও ভিন্ন বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার সুযোগ দেবে। যেমন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান পড়তে পারবে।’
এছাড়া, সব বিভাগের জন্য দুটি কোর্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে-বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং আইসিটি। এই কোর্সগুলো শিক্ষার্থীদের জাতীয় ও প্রযুক্তিগত প্রাসঙ্গিকতায় দক্ষ করে তুলবে বলে মনে করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এই অধ্যাপক।
কলা অনুষদে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে আরও আধুনিক করা হয়েছে। প্রচলিত মিডটার্ম, টিউটোরিয়াল এবং ফাইনাল পরীক্ষার পাশাপাশি এখন থেকে নিয়মিত কুইজ পরীক্ষার মাধ্যমে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হবে।
অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আউটকাম-বেইসড এডুকেশন (OBE) পদ্ধতি বাস্তবায়ন করছি, যা বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পুরোপুরি কার্যকর হবে।’
গত শিক্ষাবর্ষে কিছু বিভাগে GED কোর্স চালু করা হলেও এবার এটি সব বিভাগে বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বিভাগগুলো নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী GED কোর্সের গুচ্ছ থেকে পছন্দ করে সিলেবাস তৈরি করবে।
এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি বহুমুখী দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কলা অনুষদে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে অন্যান্য অনুষদেও প্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়াও কলা অনুষদের জন্য জিইডি কোর্স বা জেনারেল এডুকেশন নীতিমালা প্রণয়নসংক্রান্ত উপকমিটির ছয়টি প্রস্তাব আছে। এসব প্রস্তাব পরিমার্জন করে শিগগির বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। যে ছয়টি প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হলো:
১. কলা অনুষদের কারিকুলামে আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য বর্তমানে প্রচলিত ১২০ ক্রেডিটের পরিবর্তে ১৪০ ক্রেডিট প্রয়োজনীয় করা।
২. ১৪০-এর মধ্যে কমপক্ষে ২৮ ক্রেডিট জিইডি কোর্স রাখতে হবে। এই ২৮ ক্রেডিটের জন্য ও ক্রেডিটের সাতটি কোর্স বেছে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বেছে নেওয়ার জন্য থাকবে মানবিকের নয়টি, সামাজিক ও ব্যবসায় শিক্ষার ১১টি ও বিজ্ঞানের ছয়টিসহ ২৬টি জেনারেল এডুকেশন কোর্স।
৩. একটি করে কোর্স নিয়ে এই সাতটি জিইডি কোর্স প্রবর্তন করা যেতে পারে। তবে শর্ত হলো:
ক. বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং তথ্যপ্রযুক্তি কোর্স সকল বিভাগের জন্য বাধ্যতামূলক থাকবে।
খ. মানবিক বিভাগের কোর্সসমূহের মধ্যে নিজ নিজ বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোর্স ওই বিভাগের জিইডি হিসেবে বিবেচিত হবে না।
৪. গবেষণা-পদ্ধতি বিষয়ক একটি কোর্স সকল বিভাগের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। কোর্সটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাঠ্যসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে ডিজাইন করতে হবে, কোর্সটি সপ্তম সেমিস্টারে অফার করতে হবে এবং সেটি জিইডি হিসেবে বিবেচিত হবে না।
৫. জিইডি কোর্সসমূহ কোন সেমিস্টারে অফার করা হবে, সেটি সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিজেদের সুবিধা অনুসারে নির্ধারণ করতে পারবে। তবে জিইডি কোর্সসমূহ প্রথম বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষের মধ্যে সমাপ্ত করা উত্তম।
৬. কারিকুলাম ফরম্যাট অনুসারে ১৪০ ক্রেডিট বণ্টিত হবে প্রথম থেকে অষ্টম সেমিস্টারের প্রতি সেমিস্টারে ১৭ ক্রেডিট × ৮= ১৩৬ ক্রেডিট করে। এরমধ্যে চারটি ও ক্রেডিটের কোর্স এবং বর্তমানের ন্যায় টিউটোরিয়াল যা সংযোগ ক্লাস ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ১ ক্রেডিট বরাদ্দ থাকবে।