ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বহিরাগতরা চুরি, মাদক সেবন করছে
রুমি নোমান
করোনাভাইরাসের আক্রমণে কোভিড-১৯ রোগে কুষ্টিয়ার একমাত্র সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’-এ ছাত্র, ছাত্রীদের অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। যেকোনো বড় ধরণের সমাবেশও নিষিদ্ধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বহিরাগতের অবাধ যাতায়াত তারা ঠেকাতে পারেননি। তাতে বাইরের নানা শ্রেণী ও ধরণের লোকেরা যখন, তখন; রাতের বেলায় ঢুকে পড়ছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে বহিরাগতদের মাধ্যমে বেড়ে চলেছে চুরি, ছিনতাই, ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, মাদক ব্যবসা, বেপরোয়া মোটর বাইক চালানোসহ নানা ধরণের অপকর্ম।
একটি ঘটনা
১৩ জানুয়ারি সোমবার, রাত। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ক্রিকেট মাঠ থেকে চোরের দল পিচ কাভারটিই চুরি করে তুলে নিয়ে গেল। এর আগে তারা দফায়, দফায় টেনিস গ্রাউন্ডটির বাতি খুলে নিয়ে গিয়েছে, সেন্ট্রাল জিমনেশিয়ামের বাইরের স্টোরটিতে রাখা লাইট সেট ও নলকূপ খুলে নিয়ে গিয়েছে। ক্যাম্পাসের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই সামগ্রীগুলোর দাম ১ লাখ টাকার কাছাকাছি বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি আজো। খোঁজ নেওয়াও হয়নি ভালোভাবে তারা কারা। বিশ্ববিদ্যালয়টির শারীরিক শিক্ষাবিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন, প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি। তারা ধারণা করছেন চুরিগুলো বহিরাগত বাজে লোকেরা করেছে। ছাত্র, ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন-তাদের কেন্দ্রীয় ব্যায়ামগারের নানা ধরণের যন্ত্রপাতিগুলো বাইরে থেকে ঢুকে পড়া মানুষরা ব্যবহার করেন। জিমনেশিয়ামের ভেতরটিতে এসে তারা খেলা করেন। এই প্রতিবেদক এই অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। তিনি গিয়ে দেখেছেন, কয়েকজন বহিরাগত যুবক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগারের উপকরণগুলো দিয়ে ব্যায়াম করছেন।
ছাত্রী হলের রান্নাঘরে বাইরের পুরুষ
১ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার, সকালে সাতটা। অনেক ভোর কুষ্টিয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নতুন ব্লক। ছাত্রীরা তাদের কিচেনে গিয়ে দেখলেন, একজন মাঝবয়সী পুরুষ লোকটি সেখানে বেড়াচ্ছেন। এরপর সাহস করে তারা কয়েকজন মিলে হলের রুম থেকে বেরিয়ে তিনি কে, কেন এসেছেন-জানতে চান। ফলে লোকটি দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেলেন হলের গেটটি দিয়ে। তখন সেটি খোলা ছিল! তারা আরো অভিযোগ করেছেন, তখন গেটে তাদের নিরাপত্তার জন্য আনসার বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালনের কথা ছিল। সারাদিনই তারা পালাক্রমে সেখানে চাকরি করেন। তবে তখন তাদের কাউকে দেখা যায়নি। এরপর এই ঘটনা নিয়ে তারা হলের প্রভোষ্টের কাছে অভিযোগ করেছেন ও জানিয়েছেন তারা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। একজন ছাত্রী জানিয়েছেন, ‘আনসার থাকার পরও বহিরাগত পুরুষ কীভাবে মেয়েদের হলে ঢুকে পড়লো? কোনো দুর্ঘটনা হলে তার দায় কী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপক বা কর্তৃপক্ষের কেউ নিতেন? ফলে সবসময় আমরা ভয়ে, ভয়ে আছি। নিরাপত্তা আরো বাড়ানোর জন্য দাবি করছি।’
মাদকাসক্তদের প্রবেশ, মাদক সেবন চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক এলাকায় নানা ধরণের মাদকসেবন করছে বহিরাগতরা। ক্যাম্পাসের ভেতরে তারা দ্রুত গতিতে মোটর সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন। সুযোগ পেলেই ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ও তাদের উত্যক্ত করছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে তাদের অবাধ যাতায়াতের ফলে সবসময়ই চুরির ঘটনা ঘটছে। তারা চলাফেরার সুবিধার জন্য এমনকি ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীরও ভেঙে ফেলছে।
অভিযোগ করছেন ছাত্র, ছাত্রীরা
ইসলামী বিশ্ববিধ্যালয়ের ছাত্রী সানজানা সোহানা বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের মধ্যে আমাদের বারবার শিক্ষকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলছেন। তবে তারা বহিরাগতরা সবসময় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসছে, নানাভাবে, প্রায়ই আমাদের হয়রানি করছে-এই বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও দমন করছেন না।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবশে বহিরাগতরা নষ্ট করে ফেলছে, আমাদের অনেক ক্ষতি করছে। তবে তাদের বিপক্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রশাসন কোনো ধরণের প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।’
প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন
‘আমি আমাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিষিদ্ধের পক্ষে। আমরা জানি, তারা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন, ভিন্ন পরিচয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। নিরাপত্তা জোরদার করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।’
ওএস।