শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চাকরি ছাড়লেন জাবি শিক্ষক
অধ্যাপক জাহিদুল করিম। ছবি: সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিম।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ইমেইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তিনি উপাচার্যের কাছে তার অব্যাহতিপত্র পাঠিয়েছেন।
জাহিদুল করিম তার অব্যাহতিপত্রে লিখেছেন, দেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদাসীনতা এবং শিক্ষকদের দলীয় মনোভাব আমাকে অনেক ব্যথিত করেছে। আমি সব সময় সত্য এবং ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছি এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সর্বদা পাশে থেকেছি।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের একটি ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর মূল্যবান জীবন দিতে হয়েছে। সরকার চাইলে দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে পারতো, তাহলে এত প্রাণ হানির ঘটনা ঘটতো না। যে সকল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, তাদেরকে নিয়ে তাদের পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। সন্তান হারানোর বেদনায় তারা আজ দিশেহারা। তাদের সাথে সাথে সমগ্র জাতি আজ শোকাহত, যোগ করেন তিনি।
জাহিদুল করিম আরও উল্লেখ করেছেন, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবি যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তা এই জাতির জন্য একটি কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং কিছু সংখ্যক প্রতিবাদী শিক্ষকদের রক্তাক্ত করার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড দেখেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকদের আমি নির্লিপ্ত থাকতে দেখেছি।
শিক্ষকদের ভূমিকা আজ জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলীয়করণের কারণে শিক্ষক সমাজের বিবেক লোপ পেয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। শহীদ সকল শিক্ষার্থী এবং আহত সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা প্রকাশ করছি এবং তাদের জন্য দোয়া করছি। সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা বোধকে জাগ্রত করতে আমি সহযোগী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি হতে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি ঘোষণা করছি।
যোগাযোগ করা হলে জাহিদুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি চেয়েছি। অব্যাহতিপত্রে কারণ উল্লেখ করেছি এবং আমার বক্তব্য উপস্থাপন করেছি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, আমরা সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিমের অব্যাহতিপত্র পেয়েছি।