হিমেলের নামে হল ও রাস্তা বানানোর আশ্বাস
লেখা ও ছবি সংগ্রহ: তানভীর তুষার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘাতক ট্রাকের চাপায় নিহত ছাত্র মাহবুব হিমেলের জন্য আন্দোলন করছেন রাবিতে তার স্বজনেরা। তাদের সবার সঙ্গে আজ বুধবার বিকেল পাঁচটায় আলোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।
সাবাস বাংলাদেশ’র মাঠে এই ছাত্র, শিক্ষকের শোকালোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে হিমেলের অসহায় মা, যার কেউ নেই-এখন আর; একমাত্র সন্তানটি মারা গিয়েছেন নির্মমভাবে ঘাতকের হাতে; তার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন রাবির উপাচার্য। বলেছেন, ‘এর মধ্যেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় হিমেলের মায়ের নামে আলাদা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। আমি ও আমরা শিক্ষকরা সবাই তাকে আমাদের বোন হিসেবে আজীবন মনে করব। এই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে সারাজীবন তিনি যেন ভালোভাবে চলতে পারেন, সেজন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তার পাশে থাকবে। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ক্যাম্পাস থেকে মাসে, মাসে আথিক সাহায্য পাবেন। আহত ছাত্র চারুকলার চতুর্থ বষের রাইহান প্রামাণিকের চিকিৎসার সব ধরণের খরচ আমরা বহন করব। সে লেখাপড়ায় যেন আবার ফিরতে পারে, পাশ করতে পারে সেই সাহায্য করা হবে।’
আন্দোলনকারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের মানুষের দাবীর কাছে নতি স্বীকার করেছেন তাদের প্রিয় ভিসি স্যার। তিনি দুইশ ছাত্র, ছাত্রী এবং অনেক শিক্ষকের সামনে ঘোষণা করেছেন, “আমাদের যে বিজ্ঞান ভবনটি বানানো হচ্ছে, সেটির নাম তো বটেই; শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনের পথটিও আমরা ‘শহীদ হিমেল সড়ক’ নামে নামকরণ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমি এই নির্দেশ জারি করলাম। এটি কার্যকর করা হবে।”
ছাত্র, ছাত্রীরা উপাচার্যের সামনে প্রথমেই তাদের ছয়দফা দাবি আবার তুলে ধরেন। সেগুলো হলো-১. নিহত হিমেলের পরিবারকে যেকোনো উপায়ে পাঁচ কোটি টাকা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে হবে। ২. বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সব ধরণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. ক্যাম্পাসের প্রয়োজনীয় স্থানে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন করতে হবে। ৪. আহত রাইহান প্রামাণিক রিমেল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তাকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তার চিকিৎসার ব্যয়ভারও বহন করতে হবে। ৫. নির্মাণাধীন বিজ্ঞান ভবনটি মাহবুব হিমেলের নামে নামকরণ করতে হবে, যে সড়কে নিহত হয়েছেন, সেটির তার নামে নামকরণ করতে হবে ও ভবনের পাশে শহীদ হিমেলের নামে স্মৃতিফলক নির্মাণ করতে হবে ৬. ঘটনাটিতে জড়িতদের সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
তাছাড়াও তারা রাকসু নিশ্চিত, সবাইকে নিরাপত্তা প্রদান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত প্রবেশ বাতিলসহ বেশকটি দাবি করেছেন।
তাদের দাবী চিন্তা-ভাবনা করে ধীরে ধীরে প্রয়োজনানুসারে বিবেচনা ও পূরণ করা হবে উল্লেখ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরো জানিয়েছেন, “তোমাদের এই সভায় আসতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। তোমাদের মতোই আমার মনে রক্ত ঝরছে। আমি নিজে হিমেলের মা ও মামার সঙ্গে কথা বলে এখানে এসেছি। তার মায়ের চিকিৎসার অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহন করবে।’
ভিসি স্যার জানিয়েছেন, “আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। হিমেলের মায়ের একাউন্টে প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা জমার ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমি নিজেই হিমেলের মায়ের নামে একাউন্ট খুলে দিয়েছি। তোমাদের সাহায্য চাই। নতুন বিজ্ঞান ভবনটির ‘শহীদ হিমেল বিজ্ঞান ভবন’ নাম হবে।”
অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার তার জীবনের কথা বলেছেন আবেগে, ‘আমি ৫০ বছর ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছি। আমি তোমাদের সবাইকে সাথে রেখে কাজ করব।’
তখন সময় ছাত্র, ছাত্রীরা রাবির চারুকলা অনুষদের রাস্তার রেল ক্রসিংটিতে নিরাপত্তার শঙ্কা প্রকাশ করলে ওভারব্রিজ নির্মাণ করে দেবার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে দেবার কথা জানিয়েছেন।
উপাচার্য বলেন, ‘নিরাপত্তার দাবীর বিষয়ে বলব-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে মাননীয় প্রক্টরের মাধ্যমে বহিরাগতদের আমাদের ক্যাম্পাস থেকে দূর করা হবে। আমি তোমাদের করজোরে অনুরোধ করব-নেশাসহ অন্যান্য অপরাধের জড়িতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেবে না।’
ওএস/