শোক নেমেছে হিমেলদের গন্ডগ্রামে
তানভীর তুষার
গ্রামে পৌঁছানোর আগেই, গতকাল রাতে; বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সংগ্রহের পূর্বেই হিমেলের মারা যাওয়ার খবর পেয়ে গিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। কে নিয়ে গিয়েছেন বন্ধুদের হয়ে হিমেলের মারা যাওয়ার খবর মায়ের কাছে? তখন থেকে অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন তার বয়স্ক নানী। মায়ের শরীর আরো অনেক বেশি খারাপ। তিনি তার একমাত্র অবলম্বন ছিল। হিমেল তার বড় আদরের ধন, একমাত্রও বটে। মাহবুব হিমেলের বাবা নেই। বেশ আগে মারা গিয়েছেন। নেই কোনো ভাই, বোনও। এই ঘটনায় মায়ের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে ও তার পর থেকে তিনি হৃদরোগী।
বাড়িতে জমিজমার আয় বাদে ছেলের পাঠানো হাত খরচ থেকে তিনি চলতেন। নানী বাড়িতে থাকতেন। গ্রামে অপয়া বলে মেয়েদের স্বামী মারা যাওয়ার জন্য দায়ী করা হয় এবং নিন্দা-মন্দ শুনতে হয় সবসময়। এর বাদেও হিমেলরা সুবিচার পাননি। তাদের দাদার সম্পত্তি বাবা মারা যাওয়ায় চাচারা জবরদখল করে খাচ্ছেন। তাতে এই পরিবারটির চলাই কষ্ট।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র হিমেল অসম্ভব সুন্দর শিল্পকর্ম করতে পারেন। তিনি শিল্পকলা বিভাগে পড়েন। এই শিল্পকর্মগুলো বন্ধু, বান্ধব, শিক্ষক ও পরিচিতদের সূত্রে বিক্রি করে যে আয় হয়; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ড্রামা অ্যাসোসিয়েশনের (রুডা) অন্যতম কমী হিসেবে তিনি প্রথম বর্ষ থেকে যুক্ত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নাটক করে শিক্ষকদের কাছ থেকে যে সামান্য উপঢৌকন মেলে, উত্তরবঙ্গের প্রাচীন নাট্যমঞ্চগুলো অভিনয় করে, রাজশাহী কলেজসহ আশপাশের ক্যাম্পাসে অভিনয়ের দৌলতে দর্শনীর বিনিময়ে তাদের আয় থেকে সমভাগ পেয়ে তিনি লেখাপড়ার খবর ও মায়ের ওষুধ এবং জীবিকার খরচ যতটুকু পারতেন দিতেন।
ফলে একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে মায়ের পাগলপ্রায় অবস্থা। নানা আর বেঁচে থাকতে চান না। সেই ছোট্ট হিমেল আর নেই-এই খবর তাকে ভালোভাবে আগে দেওয়াও সম্ভব হয়নি। তবে এখন তিনি নির্বাক। মামার কান্না থামেনি। সেই রাত থেকে চলছে। যে বন্ধুরা তার লাশ নিয়ে গিয়েছেন, তারা কান্নার সাথী হয়েছেন আবারও। শোক নেমেছে মাহবুব হিমেলদের নানাবাড়ি নাটোরের গন্ডগ্রামে।
ওএস।