২৫ দেশের অধ্যাপক, ১৬ বিজ্ঞানী প্রাইম এশিয়াতে
বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইম এশিয়া ইউনির্ভাসিটির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের উদ্যোগে অনুজীব বিজ্ঞানের ওপর দ্বিতীয় আন্তজাতিক ই-কনফারেন্সটি গতকাল ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
আমাদের দেশের সময় সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সারাদিন ধরে অনলাইনে এই সম্মেলনে দ্বিতীয় দিনের আয়োজন ছিল বনানীর ক্যাম্পাসে।
আন্তজাতিক ই-কনফারেন্সটির শিরোনাম “সেকেন্ড অ্যানুয়াল প্রাইম এশিয়া ইউনিভাসিটি ইন্টারন্যাশনাল ই-কনফারেন্স অন ‘আসপেক্টস অব মাইক্রোবায়োলজি ইন দি হেলথ কেয়ার সেক্টরস’।”
বাংলায় ‘স্বাস্থ্যসেবা খাতে অনুজীববিজ্ঞানের ভবিষ্যত’।
দ্বিতীয় বার্ষিক এই কনফারেন্সের আহবায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব সায়েন্সেস’র ডিন ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. শুভময় দত্ত।
তিনি জানিয়েছেন, “আমাদের এই বছরের সম্মেলনে কোভিড-১৯’র উদ্বেগ ও চলমান ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন এবং মহামারি রোগটি নিয়ে মূলবক্তারা আলোচনা করেছেন। যেমন অধ্যাপক মোহাম্মদ মোরশেদ-জুনোটিক ডিজিজেস অ্যান্ড ইমাজিং প্যাথোজেন ডিপার্টমেন্ট প্রধান, পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি, বিসি সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল, ইউনির্ভাসিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কানাডা; প্রধানত সার্চ-কোভ-২ ভাইরাস; যেটি থেকে ‘কোভিড ১৯’ ভাইরাসের জন্ম; সেটির ওপর আলোকপাত করেছেন।”
‘বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উত্থান, কোভিড-১৯ রোগটি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সচেতনভাবে জীবনযাপন, সামাজিক কাযক্রম পরিচালনা ও নতুন ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে আমাদের সবাইকে কীভাবে থাকা উচিত, নতুন ও পুরোনো কেসগুলো মোকাবেলায় ভ্যাকসিন প্রদান এখানে কেমন ভূমিকা রেখেছে’-জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ এবং জনগণকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনির্ভাসিটি অব লুইজিয়ানার গবেষণা, উদ্ভাবন ও অথনৈতিক উন্নয়ন বিভাগের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক ড. কুমার পিয়াল দাস সার্চ-২’র নতুন এই রূপ এবং এমন রোগগুলোর হুমকি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
অধ্যাপক ড. শুভময় দত্ত মূত্রনালীর নানা ধরণের রোগে ভোগা, এই সংক্রান্ত সংক্রমনাক্রান্তদের ওপর কোভিড-১৯ রোগের প্রভাব নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন।
আরো বলেছেন, করোনা ভাইরাসের মহামারি ধরণের রোগে আক্রান্ত অসুস্থ রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নেবার সময় তাদের সংক্রমণ রিপোর্টগুলো অসম্পূর্ণ ও অপর্যাপ্ত ছিল।
তাকাশি উয়েমুরা, জাপানের ওসাকা প্রিফ্যাকচার ইউনিভাসিটির প্রফেসর এমেরিটাস বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাপানে ও অন্যান্য দেশে ভূমিকম্প, প্রবল বৃষ্টিপাতের মতো প্রাকৃতিক সংকটগুলো মোকাবেলার পাশাপাশি এখন বিশ্বের প্রধান সংকট স্বাস্থ্যবিষয়ক-কোভিড ১৯ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে স্থানীয় সরকারগুলো কীভাবে মোকাবেলা করছে।
তিনি জাপানের কোচি প্রিফ্যাকচার ইউনির্ভাসিটির স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদের তার করা কটি গবেষণার বিবরণ তুলে ধরেন, ফলাফল জানান।
প্রাইম এশিয়া ইউনির্ভাসিটি ও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোভিড-১৯ রোগের মতো মহামারি রোগের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা এবং আরো সব বিষয়ে সহযোগিতামূলক গবেষণার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজির অনারারি প্রফেসর ও এশিয়ান ফেডারেশন অব বায়োটেকনোলজির ভাইস-প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক দেশে বায়োটেকনোলজিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার সম্ভাবনা এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তিনি বিষয়ে এই শিল্পকারখানা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
আরো আলোচনা করেছেন তার অভিজ্ঞতা থেকে-কীভাবে বায়ো-ইন্ডাষ্ট্রি থেকে উৎপাদিত মাইক্রোবিয়াল বা জীবাণুজাত পণ্যগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করতে ও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্স রিসার্চ ইন সায়েন্সেস (সিএআরএস)’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কমকতা ও বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক ড. এম লতিফুল বারী দেশে খাদ্য নিরাপত্তার গুরুত্ব কী, কী; টেস্টিং কিট দ্রুত নির্মাণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে কেমন করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করা যায়-সে আলোচনা করেন।
দ্বিতীয় দিনের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা করেছেন প্রাইম এশিয়া ইউনির্ভাসিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুন্নবী মোল্লাহ।
তিনি আলোচনায় বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুজীববিজ্ঞান বিভাগ বিজ্ঞানী, গবেষক, মেডিক্যালের ছাত্র, ছাত্রীদের পাশাপাশি লেখাপড়ায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ- সেটি আপনাদের আলোচনায় ভালোভাবে প্রমাণিত হলো।’
আরো বলেছেন, ‘চলমান কোভিড ১৯ রোগের এই মহামারির সময়ে আবারও প্রমাণ হয়েছে-মানব কল্যাণ, মানব সভ্যতার বিকাশ ও আধুনিকায়নে অনুজীববিজ্ঞানের সরাসরি ও কার্যকর অবদান আছে।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুন্নবী মোল্লাহ বলেছেন, ‘চলমান বৈশ্বিক মহামারিটি মোকাবেলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মাইক্রোবায়োলজিস্ট বা অনুজীববিজ্ঞানীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূণ ভূমিকা সারা বিশ্বে রেখে চলেছেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘সরকারের স্বাস্থ্যসেবাখাতে বিভিন্ন খাতের অনুজীববিজ্ঞানীদের সরাসরি অংশগ্রহণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘আসপেক্টস অব মাইক্রোবায়োলজি ইন দি হেলথ কেয়ার সেক্টরস’ বা ‘স্বাস্থ্যসেবা খাতে অনুজীববিজ্ঞানের ভবিষ্যত’-ই-কনফারেন্সটি সফলভাবে সম্পন্ন করায় আয়োজক কমিটির প্রতিজন অধ্যাপক, গবেষক, ছাত্র, ছাত্রী; বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কর্মকর্তা, কর্মচারীকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
মূল্যবান গবেষণা, আলোচনার জন্য আমন্ত্রিত সব অতিথিকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
১২, কামাল আতাতুক অ্যাভিনিউ, বনানীর প্রাইম এশিয়া ইউনির্ভাসিটিতে নানা দেশর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা ১শ ৫০টি গবেষণা নিবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেছেন অন্যদের সঙ্গে।
তারা মাইক্রোবায়োলজি বা অনুজীববিজ্ঞানের সাতটি বিভাগ নিয়ে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন, আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনও হয়েছে।
এই আন্তর্জাতিক সেমিনারে মোট ১৬ জন নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানী ছিলেন নানা দেশের। তারা বিশ্বব্যাপী নানা সমস্যার সমাধানে ও বিভিন্ন রোগের সমাধানে অনুজীববিজ্ঞানের গুরুত্ব ও সঠিক প্রয়োগের ওপর গবেষণামূলক প্রবন্ধগুলো উপস্থাপন করেছেন।
ইউনির্ভাসিটির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও এই ই-কনফারেন্স আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. আসাদুজ্জামান শিশির সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য সবাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
আয়োজক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের লেকচারার মারুফ অবনী বিশ্বের কল্যাণ, তাদের সুস্বাস্থ্য ও দীঘায়ু কামনা করে সমাপ্তি টানেন বলে জানিয়েছেন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সহকারী পরিচালক সৈয়দ এ. হাসনাত।
ওএস।