একই ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় এবং মদের বার
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকার ১৪৭/এ/১ তাহের ভবনে ঢুকে বুধবার (৬ মার্চ) বেলা পৌনে ২টার দিকে মদের ‘বার’-এর লোকেশন জানতে চাইলেন এক যুবক। তখন সঙ্গে সঙ্গে দুজন নিরাপত্তারক্ষী কাছে এসে বললেন, পার্সেল লাগবে নাকি ভাই? নাকি এখানেই খাবেন?
ওই যুবকের উত্তর ছিল, আমার আরও দুজন বন্ধু আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে। হয়তো এখানেই খাব। তখন এক নিরাপত্তারক্ষীর পরামর্শ ছিল- ‘ওপরে চলে যান। সেখানেই অপেক্ষা করেন।’ এ প্রতিবেদকের সামনেই ঘটছিল এ ঘটনাটি।
সরেজমিন তাহের ভবনে ঢুকে দেখা যায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ‘ডিপিএল’ (ডোমিনেজ পিৎজা লিমিটেড) মদের বার। চতুর্থ তলায় সিএমসি হেলথ কেয়ার লি.। পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম তলা পর্যন্ত বেসরকারি সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। চিলেকোঠায় রয়েছে ওয়েস্টার্ন আইডিয়াল ইনস্টিটিউট নামে বেসরকারি পলিটেকনিকের অফিস।
জানা গেছে, তাহের ভবনের মালিক সালমা বেগম যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। এই ভবন থেকে দুটি ভবন পার হয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আইবিএ’ হোস্টেল। এর ঠিক বিপরীতেই অবস্থান আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক’-এর। ডিপিএল বারের আশপাশে বসবাসকারী ভবনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলছিলেন, এই বারের মালিক অনেক প্রভাবশালী। নাম প্রকাশ করলে তাদের অনেক ক্ষতি হতে পারে।
প্রায় প্রতিদিনই মাতাল হওয়া মানুষের কাণ্ড-কারখানা দেখতে হয় আমাদের। কারণ বারের চারপাশেই আবাসিক এলাকা। সঙ্গে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র রায়হান উদ্দীন (ছদ্মনাম) বলছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রই নিয়মিত কাস্টমার ডিপিএলের। বাকিটা বুঝে নিয়েন। জানা গেছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৬ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ‘ডোমিনেজ পিৎজা লিমিটেড’ (ডিপিএল) বারের লাইসেন্স দেয়।
এই বারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হচ্ছেন সাকি নূর ইসলাম। অন্যতম একজন পরিচালক মো. ইকবাল নামের একজন। ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এই মদের বার। সন্ধ্যার পর থেকেই আলো-আঁধারিতে চলতে থাকে উদ্দাম বিভিন্ন ভাষার সংগীত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম নূরুল হুদা বলেন, আমি আপনাকে পরে কল করব। আমি এখন গণপরিবহনে আছি।
পরে তিনি এক খুদে বার্তায় বলেন, ‘গ্রিন রোডের তাহের টাওয়ারের সঙ্গে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির কোনো সম্পর্ক নেই। তাহের টাওয়ার ভবনে আমাদের ইউনিভার্সিটির একজন ট্রাস্টি সদস্যের ওয়েস্টার্ন আইডিয়াল ইনস্টিটিউট নামে একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠান ও ভবনের সঙ্গে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির কোনো সম্পর্ক নেই।’
ডিপিএল বারের ম্যানেজার ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমরা ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ডেকোরেশনের কাজ শুরু করেছি। আমাদের সাত-আট মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় এসেছে এই ভবনে। এখন ভবন মালিকই বলতে পারবেন তিনি কেন বিশ্ববিদ্যালয়কে ভাড়া দিয়েছেন।