বাউরেস মোট ৩ হাজার ৪শ ৫৬ টি গবেষণা প্রকল্প সম্পন্ন করেছে
কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু
বাংলাদেশের কৃষি শিক্ষা, গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)র অন্যতম প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইউনির্ভাসিটি রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস)’ আয়োজিত তিন দিনের বাষিক গবেষণা সম্মেলন গতকাল ২৮ জানুয়ারি শুরু হয়েছে।
প্রতিবছরের সম্মেলনটি এবারও ‘অ্যানুয়াল ওয়ার্কশপ অন বিএইউ রিসার্চ প্রগ্রেস ২০২০-২০২১’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের এই কর্মশালার বিষয় ‘উন্নত ভবিষ্যতের পথে টেকসই ও অভিযোজিত কৃষি’।
বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. শামসুল আলম অনলাইনে সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের কৃষি গবেষকদের আরো সাফল্যমন্ডিত হতে হবে। এজন্য তাদের খাদ্যশষ্যের প্রয়োজনীয় উন্নততর ও কার্যকর জাতগুলোকে আরো আবিস্কার করতে হবে। পেঁয়াজ, আদা, রসুন ইত্যাদি বিভিন্ন মসলা জাতীয় পণ্যের জাত উদ্ভাবনের দিকে আপনারা আরো নজর দেবেন। তাতে বিদেশ থেকে আমাদের এই পণ্যগুলো আর আমদানী করতে হবে না। উৎপাদন ব্যয় কম কিন্তু উৎপাদিকা বেশী-এমন গবেষণা, কৃষিজাত পণ্যের মান উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, সুষম বাজার ব্যবস্থাপনা, পিএইচডি রিসার্স ও মাস্টার্সের থিসিসের মান বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সকলকে।’
কর্মশালায় প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেছেন, ‘আমাদের সবার অনার্সের ছাত্র, ছাত্রী বিশেষত ফাইনাল ইয়ারের মেধাবী ও আগ্রহীদের গবেষণায় যুক্ত করতে হবে। তাতে তাদের কর্মদক্ষতা ও জ্ঞানের আরো বিকাশ ঘটবে। ফলে দেশ ও বিশ্ব সমৃদ্ধ হবে।’
বাকৃবি উপাচার্য জানিয়েছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মনে লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে আমাদের সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও দেশী-বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়কে কাঁধে, কাঁধ মিলিয়ে সহযোগিতা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সুচারুভাবে কাজ করতে হবে।’
প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান আরো বলেছেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবার গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলোর প্রচার বাড়াতে হবে। এতে গ্রামবাংলার কৃষকদের দোরগোড়ায় উন্নত প্রযুক্তিগুলো সহজে পৌঁছে যেতে পারবে।’
উপাচার্য নবীন শিক্ষকদের গবেষণার কাজে আরো এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।
ভবিষ্যতে বাকৃবিকে সাউথ এশিয়ান হাব হিসেবে দেখার প্রচেষ্টা ও আশাবাদ প্রচেষ্টা ব্যক্ত করেছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার প্রথমদিনে বাউরেসের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পরেশ কুমার শর্মার সঞ্চালনায় কমশালায় স্বাগত বক্তব্য রেখেছেন প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম মমিনুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, বাউরেস ১৯৮৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এ যাবৎ ৩ হাজার ৪শ ৫৬ টি গবেষণা প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
প্রথম দিনের ওয়েবিনারে অংশ নিয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. তাজ উদ্দিন, অধ্যাপক ড. এম এ আউয়াল, অধ্যাপক ড. মো. মনির উদ্দিনসহ বিভিন্ন বিভাগের অনেক অধ্যাপক।
প্রথমদিনসহ আজ ২৯ ও আগামীকাল ৩০ জানুয়ারিতে ২০২১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের অধীনে সম্পন্ন সর্বমোট ৪শ ৬৩টি গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল উপস্থাপিত হচ্ছে।
এই প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন করেছে ২৫টি দেশী এবং ২১টি আন্তর্জাতিক সংস্থা।
কর্মশালায় মোট ১৯টি টেকনিক্যাল সেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাউরেসের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খানের সভাপতিত্বে বাষিক গবেষণা সম্মেলনে বিশেষ অতিথি আছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার ও ‘এসিআই এগ্রি-বিজনেস’র প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফ. এইচ. আনসারি।
উল্লেখ্য, গবেষণার এইচ-ইনডেক্সের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ হাই ইনডেক্স স্কোরধারী ৫ জন ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদওয়ারি সিনিয়র, জুনিয়র-দুটি ক্যাটাগরিতে মোট ১১ জন সেরা গবেষককে ‘গ্লোবাল রিসার্চ ইমপ্যাক্ট রিকগনাইজেশন অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ প্রদান করা হচ্ছে এবার।
কৃষিখাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখায় খামারি পর্যায়ের ৪ জন উদ্যোক্তাকে ‘অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী খান স্মৃতি কৃষি পুরস্কার-২০২২’ প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা প্রকল্প থেকে ‘ইমপ্যাক্ট-ফ্যাক্টর জার্নাল’-এ গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করায় প্রকাশনা খরচ বাবদ ১৫ জন গবেষককে ১০০ ডলারের সমপরিমাণ টাকা প্রকাশনা ফি হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে।
৪শ ৬৩টি গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিপুল পরিমাণ গবেষক হাজির হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আগ্রহী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রীরা আছেন সেখানে, অনলাইনেও।
অনলাইনে যুক্ত হবার সুবিধা নিয়ে ভার্চয়ালি আছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিভিন্ন অনুষদের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষক-গবেষক।
বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তা কৃষক ও খামারিরা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এসেছেন।
আরো আছেন বিভিন্ন গবেষণা ও কৃষিখাতে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের অতিথিরা। অনলাইনেও তারা আছেন।
প্রথম দিনে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ওয়েবিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় রত হাবিবুর রহমান প্রমুখ কথা বলেছেন।
ওএস/২৯-১-২০২২।