বার, বার ফিরে কেন আসেন?
লেখা : ওমর শাহেদ, ছবি : তানভীর হাসান
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এখন উত্তাল। টানা আন্দোলনের ঝড় বইছে, থেমে গিয়েছে এই প্রলয় ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হকের আগমনে। দীঘকাল-টানা ২৫টি বছর বাংলাদেশের প্রথম এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন তারা। আমেরিকার বেল রিসার্চ ইনিস্টিটিউট থেকে গবেষণার অনেক টাকা দামের চাকরি ছেড়ে এক গহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেলেন ঝাঁ চকচকে এক তরুণ। নাম তার মুহম্মদ জাফর ইকবাল। পুলিশ অফিসার ফজলুর রহমানের তিনটি ছেলের দ্বিতীয়জন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হতে হয়েছে এই মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তাকে। স্ত্রী আয়েশা ফয়েজের হাতে তুলে দিয়েছেন এতিম ও সামান্য বয়সের অনেকগুলো ছেলেমেয়েকে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী হুমায়ূন আহমেদ। লেখক হিসেবে কিংবদন্তীকেও হার মানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, তাও আবার বিজ্ঞানের। তার ছোট ভাই জাফর ইকবাল কাটুন আঁকতে ভালোবাসে। ছোটদের জন্য লেখে। আমার বন্ধু রাশেদ, দীপু নাম্বার টু ইত্যাদি তার প্রতিটি কিশোর উপন্যাসই একটি স্বপ্নময় ভুবনের গল্প বলে চলে। বইগুলো তেমনভাবে সম্পাদিত নয়, হলে কেমন হতো? আমাদের দেশের কিশোর ইতিহাসের অন্যতম এই প্রবাদ পুরুষের তুলনা তিনি নিজেই। একের পর কলাম তার ইতিহাসের স্বাক্ষ্যই শুধু নয়, সত্যবাদিতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এই মানুষটি চাকরি করেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের কাছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটির নামটিই চেনানোর কৃতিত্ব তার। আর শাহজালালে নিত্য নতুন চমক দিয়ে গিয়েছেন তিনি। একের পর প্রগ্রামিং কনটেস্ট করেছেন, নানা যন্ত্রপাতি আবিস্কার করিয়েছেন। ফলে বাংলাদেশের দু:খিনী মায়েদের সন্তানেরা আবিস্কার করতে শিখেছে, নিজেদের মেধা ও মননের বিকাশ ঘটিয়েছে শ্রেণীকক্ষের বাইরে। তারা চাকরি করতে শিখেছে গুগল, আমাজনসহ বিদেশের সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানে। এই সব কাজ তিনি কেবল করেই চলেননি, প্রতিটি ভালো কাজে তাকে ডাকতে হয়নি; নিজেই চলে গিয়েছেন। অথচ এই দেশের প্রতিজন সাংবাদিকের বিলক্ষণ জানা যেকোনো মানুষের সাক্ষাৎকার, সান্নিধ্য পাওয়া যায়; ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের পাওয়া যায় না। তিনি থাকেন তার ছাত্র, ছাত্রীদের ভুবনে; তাদের গড়ে দেবার কাজে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ অধ্যাপক তার ছাত্র, ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়টির নামযশ কেবল তার হাতেই ছড়িয়েছে। আলো হাতে ছুটে চলেছেন যে আলোর ফেরিওলা অবিশ্রাম, তাকে এগিয়ে দিয়েছেন সবাই। তারা পেছনে চলে গিয়েছেন তার বাধ্যগত ছাত্র, ছাত্রীর মতো। সে মানুষটি কোনো বিরাট কোনোকিছুর প্রত্যাশা করেন না। কোনো বড় আয়োজনে তাকে বিপুলভাবে পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তার অনেক সাধনা লুকিয়ে আছে। তার হাড়, পাঁজরের মতো সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বেড়ে উঠেছে। মানুষটি বুড়ো হয়ে গিয়েছেন। তার বিশ্ববিদ্যালয় যৌবনে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি ও তার সব কাজের সহায় পেছনে থাকা স্ত্রী অনেক দিন পর আবার হঠাৎ চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন একদল প্রতিবাদী কন্ঠস্বরের পাশে দাঁড়াতে, তাদের বাঁচাতে। তিনি জানতেন, কেবল তার কথায় তারা থামবে, নয়তো নয়। স্যালুট ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হক। আপনাদের তুলনা নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয় চিরদিন আপনাদের মনে রাখবে।