‘হল চাই, বাস চাই, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কার চাই’
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছেন। মঙ্গলবার (১৬ মে) সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত কলেজের মূল ফটকের সামনে রাস্তা অবরোধ করে এ আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় উত্তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে হল চাই, বাস চাই, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কার চাই, শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনসহ নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরান ঢাকা।
শিক্ষার্থীদের দাবি গুলো হলো-বন্ধ হওয়া দুটি বাস পুনরায় চালু করা এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নূন্যতম ৫টি বাস, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শিগগির সংস্কার, অন্যথায় ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ; শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য আবাসন সুবিধা (হল) নিশ্চিত, শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসন, কলেজের শৌচাগারগুলো ব্যবহার উপযোগী করা, শ্রেণিকক্ষে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম করা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কলেজ প্রশাসন/ শিক্ষকদের সুন্দর আচরণ এবং আন্দোলন করলে শিক্ষার্থীর ক্লাস পরীক্ষায় দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া বন্ধ, কলেজের মাঠ ব্যবহারের উপযোগী করা, চিকিৎসা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত মেডিসিন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
আফিফা আক্তার জিদনী নামের আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজ প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে যাওয়ার পর তারা আমাদের গুরুত্ব দেয়নি। তারা আমাদের সঙ্গে উল্টো খারাপ আচরণ করেছেন। আমাদের কলেজে শুধু নেই আর নেই। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই, বাস নেই পড়াশোনার পরিবেশ নেই, মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। এই কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আমারা এ সকল সমস্যা দেখে আসছি। প্রথম প্রথম কলেজ প্রশাসন আশ্বাস দিলেও আদতে তার কোনো সমাধান হয়নি।
আন্দোলনরত শাহরিয়ার নামের আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো টানা দুই ঘণ্টা আন্দোলন করার পরেও আমাদের কথা শুনতে কলেজ প্রশাসন আসেনি। এর আগে আমরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়েছি আমাদের দাবি নিয়ে। আমাদের সঙ্গে তারা কুকুরের মতো আচরণ করেছে। তাই আজকে আন্দোলনের অন্যতম একটা দাবি আমাদের কথা শুনতে হবে, আমাদের দাবি মানতে হবে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে হবে।’
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, এখানে ভর্তি হওয়ার পর থেকে শুনছি সমস্যার সমাধান হবে হবে কিন্তু আর হলো না। যে অভিভাবক শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা না শুনে উল্টো টিসি দেওয়ার হুমকি দেয় এমন অভিভাবক আমরা চাই না। তিন ঘণ্টা ধরে আমরা আন্দোলন করছি অথচ কেউ আমাদের এখনো এই আশ্বাস দেয়নি যে এতদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে। আমরা আজ রাজপথে নেমেছি। আবারও নামব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। এটা আমাদের অধিকার। শিক্ষার্থীরা জানে কীভাবে অধিকার আদায় করতে হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানা বলেন, শিক্ষার্থীদের সকল দাবি যৌক্তিক। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল এবং থাকবে। শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবি পূরণ ও বাস্তবায়নের জন্য আমরা কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব।
কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার বলেন, ছাত্রলীগের প্রধান কাজই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। শিক্ষার্থীরা যেসকল দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে এই কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে সেসকল দাবি আমারও। ছাত্রলীগ সবসময় শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যায় পাশে ছিল এখনো আছে। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হওয়া পর্যন্ত কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এই ছাত্রনেতা।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামানোর জন্য সড়কে আসেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. খালেদা নাসরীন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমার সড়কে ঝামেলা না করে কলেজের ভেতরে আসো। তোমাদের দাবি আমরা শুনব এবং কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করব।
এ বিষয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান এবং সরাসরি দেখা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
এমএমএ/