বশেমুরবিপ্রবিতে দুদকের সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিয়োগ নিয়ে গুঞ্জন
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়াকার্স দপ্তরের পরিচালক পদে দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক) কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত এক ব্যক্তিকে নিয়োগের গুঞ্জন উঠেছে। সাজাপ্রাপ্ত মো. ইউনুস শরীফ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ফেসবুক গ্রুপে ও লোকমুখে ওই পদে তাকে স্থায়ী নিয়োগের গুঞ্জন উঠেছে। যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন মহলে বেশ তোলপাড় চলছে। তাদের দাবি, বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো দুর্নীতিগ্রস্ত লোকের অবস্থান নয়। দুর্নীতির জন্য জেল খাটা আসামির আসন্ন নিয়োগ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পবিপ্রবি ক্যাম্পাস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পটুয়াখালী দুদক কার্যালয়ের একটি দল। দাখিল করা দরপত্রে প্রতারণার ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ায় তাকে আটক করা হয়।
জানা যায়, ইউনুস শরীফ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পবিপ্রবির টিএসসি ভবনের সম্প্রসারণ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করলে ৯টি দরপত্র জমা পড়ে। এসব দরপত্রের মধ্যে অনিক ট্রেডিং করপোরেশন ৩ কোটি ২ হাজার ৪৯৫ টাকার দরপত্র দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হন। তবে স্টার লাইট সার্ভিসেস লিমিটেড নামে অপর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩ কোটি ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭৩ টাকা দর দিয়ে দরপত্র দাখিল করেন। পরে তিনি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে সর্বনিম্ন দরদাতা অনিক ট্রেডিং করপোরেশনকে বাদ দিয়ে স্টার লাইট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল হক তালুকদারের সঙ্গে যোগসাজশে তাকে সর্বনিম্ন ঠিকাদার হিসেবে মূল্যায়ন কমিটির সভায় উপস্থাপন করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে তাকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। এতে পবিপ্রবির ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৩৭৭ টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়।
এই ঘটনার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি তদন্ত করে এ ঘটনার সত্যতা পায়। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয়ের তৎকালীন উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে সেই সময়ে পটুয়াখালী সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের মাধ্যমে তাকে ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জেলহাজতে পাঠানো হয়। একই ঘটনায় পবিপ্রবি থেকে ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তদন্তকালে ইউনুস শরীফ ওই ১৪ লাখ ৯২ হাজার, ৩৭৭ টাকা সরকারি কোষাগারে জমাও দেন। এ ছাড়াও আত্মসাতকরা টাকা স্বেচ্ছায় ফেরত দেওয়ায় তদন্ত শেষে দুদকের অভিযোগপত্রে ইউনুস শরীফের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পবিপ্রবি উপাচার্যের কাছে সুপারিশ করা হয় এবং দুদক স্টার লাইট সার্ভিসেস লিমিটেডে নামে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করেন।
বশেমুরবিপ্রবিতে ইউনুস শরীফকে নিয়োগের ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, উনাকে এখনও লিখিতভাবে নিয়োগ দেয়নি। তবে নিয়োগ দেওয়া হলেও হতে পারে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। তবে উনাকে যেন নিয়োগ না দেওয়া হয় এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অনেকে ষড়যন্ত্র করছেন।
এসআইএইচ