স্বাধীনতা দিবসে বিশেষ আয়োজন নেই চবির হলে
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলগুলো যেন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইল। এবারের স্বাধীনতা দিবসে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ কোনো আয়োজন নেই চবির হলগুলোতে। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা দুষছেন একে অপরকে।
যেখানে যেখানে দ্বিতীয়বারের মতো ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে স্বাধীনতা সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হলেও শিক্ষার্থীদের প্রতি একেবারেই উদাসীন।
দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। যেহেতু অন্যান্য বছরে সাধারণত দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। তবে এবার রমজানের কারণে সন্ধ্যায় খাবার দেওয়া হয়েছে। সেদিক থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের একেবারেই গা ছাড়া ভাব। স্বাধীনতা দিবসের আগে আবাসিক হলের প্রভোস্টদের নিয়ে এ ব্যাপারে হয়নি কোনো মিটিং। রমজানে আবাসিক হলের ডাইনিংগুলোতে খাবারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মিটিং হলেও স্বাধীনতা দিবসের উন্নতমানের খাবারের ব্যাপারে হয়নি কোনো আলোচনা।
এ ছাড়া গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উন্নতমানের খাবার আয়োজন করলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এ ব্যাপারে নির্বিকার। এ নিয়ে যেন কারও মাথাব্যাথ্যা নেই।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এর আগে ডাইনিংয়ের খাবারের দাম বাড়ানো হলো, শাটলে বগির পরিমাণ কমানো হলো, ডেমো বন্ধ করা হলো। শিক্ষার্থীদের জীবনকে কঠিন থেকে কঠিন করার লক্ষ্যে প্রশাসন আর কী কী পদক্ষেপ নেবে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী সৌরভ পাল বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবার স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসে আবাসিক হলগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা করেনি প্রশাসন। এটা অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশেষ দিনগুলোর জন্য মুখিয়ে থাকে। সরকার তো এটার জন্য বরাদ্দ রাখে, যেহেতু এটা বিশেষ দিন। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা অবশ্যই ব্যবস্থা করার দরকার ছিল বলে আমি মনে করি।
আরেক শিক্ষার্থী নয়ন মনি শেখ বলেন, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খাবারের আয়োজন করল। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ব্যতিক্রম হলো কেন এই প্রশ্ন থেকেই যায়। উপর থেকে আসা বরাদ্দকৃত পয়সা তারা কি গলাধঃকরণ করল?
এদিকে আবাসিক হলগুলোর ম্যানেজারদের অভিযোগ, প্রভোস্ট কমিটি, উপাচার্য ডাইনিংয়ের ব্যাপারে মিটিং করে তারা আমাদের কাছ থেকে মতামত জানতে চায় না। তারা নিজেদের মতো করে দাম বাড়ায় দাম কমায়। বাজারের পণ্যের দামের ব্যাপারে আমাদের অভিযোগ থাকে ঠিকই কিন্তু যখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় আমাদের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়।
এ বিষয়ে শাহজালাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্র থেকে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। এ কারণে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের প্রভোস্টরা এ বিষয়ে মিটিংয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। এটা মূলত কেন্দ্রের উপর নির্ভর করে।
একই হলের সেকশন অফিসার সৈয়দ মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, এবার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে হলে কোনো উন্নতমানের ভোজের আয়োজন করা হয়নি। রমজান উপলক্ষে কোনো আয়োজন করা হয়নি। ছাত্ররা অন্যন্য বছর আয়োজন উপলক্ষে হইচই করে। যেহেতু এবার রমজান তাই এগুলো এড়াতে কোনো আয়োজন নেই।
প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, এটা মূলত প্রভোস্ট কমিটির উপর নির্ভর করে। তবে এতটুকু জানি যে রমজান মাস তাই তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমি কিছু বলতে পারব না। যেহেতু তারা কেন্দ্রে আছে সব বিষয়গুলোই তাদের উপর নির্ভর করে। সবচেয়ে ভালো উত্তর তারাই দিতে পারবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড শিরীণ আখতারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
অন্যদিকে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কোনো সাড়া মেলেনি।
রমজান উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার কোনো আয়োজন হয়নি এমন তথ্যই উঠে এসেছে। প্রশ্ন থেকে যায়, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাহলে কেন রমজান উপলক্ষে আয়োজন করা হলো।
এসজি