দুই অংশে বিভক্ত ছাত্রলীগ, প্রশাসনিক ভবন অবরোধ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পরেছে। দুই অংশ বিভিন্ন ধরনের দাবিদাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি ভবন অবরোধ করেছে। বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ভবন তালা মেরে ভবনের সামনে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে শাখা ছাত্রলীগের একটি অংশ। ঠিক একি দিনে দুপুর একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন শাখা ছাত্রলীগের আরেকটি অংশ। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের সামনে আন্দোলনরত শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দাবি হলো, স্বাধীনতা বিরোধী কোন শক্তি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক জব্বার হল থেকে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল থেকে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আর-রাফি চৌধুরী, একই হল থেকে আরেক সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আকাশ, মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে সহ-সভাপতি প্রীতম আরিফ, শহীদ সালাম-বরকত হল থেকে সহ-সভাপতি রাতুল রায় ধ্রুব এবং আল বেরুনী হল থেকে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুর রহমান এনাম সহ তাদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হলের নেতা-কর্মীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আররাফি চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী কোন শক্তি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকতে পারে সেজন্য আমরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস ঘেরাও করেছি। আমরা জনতে পেরেছি তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের একাধিক বিবৃতিতে তার নাম উল্লেখ আছে। আমরা চাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিরোধী কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকুক।আমরা তার অপসারনের দাবি জানাই।
তবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক অবরোধ সম্পর্কে জানান কিনা জানতে চাইলে নেতাকর্মীরা জানান, শীর্ষ নেতৃত্বকে আমরা একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু তারা এ বিষয় নিয়ে কর্ণপাত করেননি। যার কারণে আমরা নিজেরাই এই অবরোধ কর্মসূচী পালন করছি।
দুপুর একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী। তাদের দাবি- স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত শিবির পন্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জামায়াত বিএনপিপন্থী তোষামোদ বন্ধ করতে হবে।
অবরোধ চলাকালীন সময়ে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রক্টরের পদত্যাগও দাবি করেন অনেকে। তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধে বহিরাগত প্রবেশ, ছিনতায়ের ঘটনা, মেয়েদের হলের নিরাপত্তাহীনতা সহ নানা সংকটে প্রক্টরের ভূমিকার প্রশ্ন উঠছে। তিনি তার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট নন। তবে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ উল হাসান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও সুপারিশপ্রাপ্ত না হয় সেদিকে ছাত্রলীগ সদা তৎপর। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথায়ও কোনো নিয়োগে যেন স্বাধীনতাবিরোধী কাউকে বসানো না হয় সেটা নিশ্চিত করার লক্ষেই আজকের অবরোধ।
তবে শাখা ছাত্রলীগের একাংশের অবরোধ নিয়ে কিছুই জানেন না বলেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কেউ সকালের অবরোধ সম্পর্কে আমাদের কিছু বলেনি। শাখা ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়ে পরেছে এরকম গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। কিন্তু শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কেউ মুখ খুলছেন না এ ব্যাপারে৷
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ আল হাসান বলেন, আমরা ছাত্রলীগের দাবিগুলো শুনেছি। আমরা আলোচনা করে একটা সমাধান দিব। প্রসঙ্গত, বুধবারের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পরিচালককে অপসারণ না করলে বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা।
এএজেড