প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান, থমথমে রাবি
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছেন বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এদিকে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় ও আশেপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, এই সংঘর্সে সাংবাদিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পর রাত ১টা পর্যন্ত আহত হয়ে মোট ৮৬ জন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে একজন আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা স্থীতিশীল বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর আহত অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার ও রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক শিক্ষার্থীকেই রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হতে দেখা গেছে।
বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম। তিনি বলেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন আছে। অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা কাম্য নয়। তারা সজাগ রয়েছেন। আর এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
প্রসঙ্গত, প্রথম দফায় শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ঘ চলে। এ সময় উভয়পক্ষের সংঘর্ষে, অগ্নিসংযোগ, ইটপাটকেল এবং রাবার বুলেটের আঘাতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিনোদপুর বাজার। এতে উভয়পক্ষের লোকজন আহত হয়।
এরপর মসজিদে মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান স্থানীয়রা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট থেকে স্থানীয়দের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের ছত্রভঙ্গ করতে এ সময় রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। পরে মহাসড়ক স্বাভাবিক হলে রেলপথে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। রাত ৩টার দিকে সেখান থেকে সরে যায় শিক্ষার্থীরা।
সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর পুলিশ ফাঁড়িসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীর ঘেঁষে থাকা দোকানগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেন। এতে বিনোদপুর বাজারের ৮টি দোকান সম্পূর্ণভাবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট সংলগ্ন পুলিশ ফাঁড়ির আংশিক পুড়ে গেছে।
প্রথম দফায় সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অনেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের সামনে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য তাদের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় উপাচার্য আজ ও আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন।
জানা গেছে, বগুড়া থেকে মোহাম্মদ নামের বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়ির চালক শরিফুল ও সুপারভাইজার রিপনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় আকাশের। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে এসে আবারও কন্ডাক্টরের সঙ্গে ঝামেলা বাধে। তখন স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন ও স্থানীয় দোকানদারদের ওপর চড়াও হন।
বিষয়টি মীমাংসা করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ঘটনাস্থলে গেলে তার মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেন স্থানীয়রা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্যের বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে তৎপর ছিল। তারা এখনও মাঠেই আছেন। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সব শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিজিবি-১ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
এসআইএইচ