বশেমুরবিপ্রবিতে অতিরিক্ত সেমিস্টার ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) সেমিস্টার ফি অতিরিক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি বলে মনে হয়না৷ যেখানে দেশের প্রথম শ্রেণীর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেমিস্টার ফি এক থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে রাখা হয় সে জায়গায় বশেমুরবিপ্রবিতে এত বেশি কেন? বশেমুরবিপ্রবি সত্যিকার অর্থে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নাকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়? একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আকাশচুম্বী সেমিস্টার ফি কখনোই কাম্য নয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আমার আকুল আবেদন- আমরা এমন শোষনীয় সেমিস্টার ফি থেকে মুক্তি চাই। আমরা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাই নাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত হবে শিক্ষার্থীদের এই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেওয়া।
সেমিস্টার ফি সম্পর্কিত বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মাহাবুদ শেখ বলেন, একজন শিক্ষার্থীর কাছে প্রতি সেমিস্টারে ৫-৭হাজার টাকা বহন করা চারটিখানি কথা না৷ কারণ বর্তমানে একজন শিক্ষার্থীর মেসের যাবতীয় খরচ মিলে ৬হাজার টাকার উপরে চলে যায়। সে জায়গায় নতুন করে সেমিস্টার ফি যদি ৫-৭হাজার টাকা দিতে হয় তাহলে সে শিক্ষার্থীর পক্ষে সেটা কখনোই সম্ভব হবেনা৷ কারণ একজন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এক সন্তানের পেছনে মাসে এত টাকা বহন করা কখনোই সম্ভব না।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রতি সেমিস্টার ফি বছরের শুরুতে প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় সেমিস্টারের জন্য চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়৷ এবং প্রতি সেমিস্টারে শুধুমাত্র পরীক্ষায় রেজিষ্ট্রেশন ফি ২৫০-৩০০টাকা জমা দিয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা হলে উপস্থিত হতে পারেন বলে জানা যায়।
এদিকে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি সেমিস্টার ফি বাবদ গড়ে ২হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২হাজার ৫০০টাকা ধরা হয়৷ এর মধ্যে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টার ফি বাবদ ২হাজার থেকে ২৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়। এবং পরীক্ষার কেন্দ্র ফি সহ যাবতীয় খরচ মিলে মাত্র ৫০০টাকা প্রদান করে।
অন্যদিকে দেশের অন্যান্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিষ্টার ফি বাবদ ২হাজার ৫০০টাকা - ৩হাজার টাকা নেওয়া হয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টার ফি বাবদ তারা সর্বোচ্চ ২হাজার ৫০০টাকা প্রদান করে থাকে। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টার ফি বাবদ ৩হাজার টাকা প্রদান করেছে বলে জানা যায়। এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টার ফি দুই হাজার থেকে ২৫০০টাকার মধ্যে ধরা হয় বলে জানা যায়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা শরাফত আলী বলেন, দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসি-এর নিয়মানুযায়ী চলে৷ ইউজিসি থেকে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর জন্য নির্দিষ্ট পরিমান বাজেট দেওয়া হয়। এবং প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় খরচ ইউজিসির বাজেট সহ শিক্ষার্থীদের থেকে ভর্তি ফি এবং সেমিস্টার ফি নিয়ে চলে।
তিনি আরও বলেন, সেমিস্টার ফি নিয়ে এর আগে সাধারন শিক্ষার্থী সহ ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে আমরা কথা বলেছি। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা সেমিস্টার ফি ধরেছি। এবং দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও প্রায় সম-পরিমান ফি নেওয়া হয়।
সেমিস্টার ফি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড এ কিউ এম মাহবুব বলেন, প্রতি বছর দুই বার শিক্ষার্থীদেরকে আমরা ছাত্র কল্যানের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করি। এবছরও ফেব্রুয়ারি মাসে সহযোগিতা করা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর সেমিস্টার ফি বাড়ানো হয় কিন্তু আমরা সে তুলনায় কমিয়েছি, আমরা আর কত কমাবো, আমাদেরতো একটা লিমিটেশন আছে, ছাত্রদের এবিষয়গুলো বুঝতে হবে। আমরা আর কোনো টাকা কমাতে পারবোনা। তবে যেসকল শিক্ষার্থী দরিদ্র তাদেরকে আমরা সহযোগিতা করব।
এএজেড