কাশফুলের ছোঁয়ায় শারদ সাজে ববি
শরৎ সেজেছে কাশফুলে
থরে বিথরে বালুচরে!
সাদা মেঘের শতদল উড়ছে
অপরূপা নীলাম্বরে!
প্রকৃতিতে শরতের আগমন জানান দেয় কাশফুল। স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘ আর মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। এগুলো শুনলেই মনের আঙিনায় ভেসে উঠে শরৎকালের নাম। তারই মধ্যে শরৎকালের শ্রেষ্ঠ অলংকার যেন কাশফুল।
বর্ষা ঋতুকে বিদায় জানিয়ে নীল আকাশে সাদা তুলার মতো মেঘের সঙ্গে কাশফুলের মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া প্রকৃতিতে শুধুই মুগ্ধতা ছড়ায়।
নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা শরৎ ছাড়া আর কে ভাসাতে পারে? তাইতো শরতের বন্দনায় কবিগুরু থেকে শুরু করে বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব কবি কাশফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে লিখেছেন অসংখ্য গান ও কবিতা। তবে আকাশের সাদা মেঘের সঙ্গে কাশফুলের মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া প্রকৃতিতে শুধুই মুগ্ধতা ছড়ায়। আর সেই শরতের কাশফুলে প্রাণমুগ্ধ হয়েছে দক্ষিণ বঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাস।
ববি ক্যাম্পাস প্রতি ঋতুতে প্রকৃতির রূপের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ভিন্নরূপে সজ্জিত হয়। পঞ্চাশ একরের ক্যাম্পাসটি শরতের আগমনে যেন নতুন রূপে, নতুন সাজে সেজেছে। কীর্তনখোলার তীরে বেষ্টিত বাদামী রংয়ের বিল্ডিংয়ে মোড়ানো ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ রাস্তার দুই পাশ, খেলার মাঠের পাশে ও টিএসসির সামনে ও পেছনে দেখা মিলবে শরতের অবিচ্ছেদ্য অংশ কাশফুলের। ক্যাম্পাসের দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠের পাশের রাস্তা ও টিএসসির সামনের অংশের কাশফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া ছুটির দিনগুলোতে দেখা মিলে হাজারো দর্শনার্থীদের।
পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে টিএসসি চত্বরে ভিড় বাড়ে শিক্ষার্থীদের। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে যায়, কেউবা প্রিয়তমাকে নিয়ে। হালকা বাতাসে কাশফুলের দোলের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয় তারা। কেউবা সেই অনুভূতিগুলোকে ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দী করে। আবার কেউবা সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেমবন্দী ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে জানান দেয় শরৎ এসেছে ধরায়।
শরতের এই অপরূপ সৌন্দর্যে বিমহিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. আরিফ বলেন, কাশফুলের সঙ্গে শরতের সম্পর্ক অনেকটা লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপের মতো। কিন্তু প্রেমের বন্ধন অবিচ্ছেদ্য। কাশফুলের এই ছোঁয়ায় ক্যাম্পাস নতুনরূপে সেজেছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রকৃতির এই অনবদ্য সম্পর্ক উপভোগ করার জন্য এক অন্যতম স্থান হচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
চারদিকে শুভ্র কাশফুল, আর লেকের ধারে শরীর মন জুড়িয়ে দেওয়া বাতাস। কেউ বসে গল্প করছেন। বিকাল হতেই পুরো এলাকা যেন রূপ নেয় গ্রামীণ মেলায়। কেউ বা ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। কেউ নগ্ন পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। কেউ আপনমনে গুনগুন করে গাইছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই আসছেন এই কাশবনে। কাশফুলের সমারোহে বিকালের বাতাস যেন শীতের আগমনের বার্তা দিচ্ছে।
বাংলা বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানাস বলেন, শরৎ মনে জাগিয়ে দেয় কাশফুল, স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘ আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের কথা। কাশফুলের গন্ধ নেই, কাশফুল প্রিয়জনের জন্য উপহার হিসেবে দেওয়ার ফুলও নয়। তবু কাশফুল তার শুভ্রতায় মুগ্ধ করে সবাইকে।
তবে ক্যাম্পাসের কাশফুলের মধ্যে রয়েছে রোমাঞ্চকর উন্মাদনা। সোহানা রহমান নামে এক দর্শনার্থী কবিতার ছন্দে ছন্দে বলেন, ‘দুই ধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা’- শৈশব কৈশোরের নদী তীর ধরে কাশবনের দোল খাওয়া দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। এখন আর তেমনটা নেই। এখানে কাশবনে একটু নিরানন্দ সময়টাকে উপভোগ করতে এসেছিলাম।
শরতের কাশফুল শুভ্রতা ছড়িয়ে যাক সবার মনে প্রাণে। সব পঙ্কিল দূরে ঠেলে প্রতিবার বাঙালি যেন এভাবেই মেতে উঠে শরৎ উৎসবে।
এসজি