‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছো বলে আমরা সকলে গর্বিত’
লেখা ও ছবি : আসিফ আহমেদ দিগন্ত।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজশাহী ইউনির্ভাসিটি রিপোর্টার্স ইউনিটি (রুরু)’র ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় রুরু নিজস্ব কার্যালয় রাকসু ভবনের ২০১ নম্বর কক্ষে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্বোধন করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।
রুরু কার্যালয় থেকে সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন বিভাগের সাংবাদিক ছাত্র, ছাত্রীরা আনন্দ শোভাযাত্রা করেছেন।
প্যারিস রোডসহ ক্যাম্পাসের প্রধান সড়ক ও কার্যালয়গুলো প্রদক্ষিণ করেছেন তারা। সাদা টি-শার্টে তাদের সবাইকে অনিন্দ্য সুন্দর লেগেছে।
শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) তাদের শোভাযাত্রা থেমেছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে টিএসসিসিতে 'বাংলাদেশের সাংবাদিকতা : সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ' আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য ও বাংলোদেশের বরণ্যে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাকাডেমিক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক।
মুখ্য আলোচক ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. দুলালচন্দ্র বিশ্বাস।
রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগ, রাজশাহীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন সম্মানিত অতিথি ছিলেন।
বক্তব্য দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি গোলাম কিবরিয়া।
পরিচালনা করেছেন রুরু সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিফ রিয়াদ এবং অভ্যর্থনা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মার্জিয়া আক্তার।
রুরু সভাপতি রাশেদ শুভ্র আলোচনায় সভাপতিত্ব করেছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক ছাত্র, ছাত্রীদের তাদের অবদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি তাদের অবদানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে স্মরণ করেছেন।
রুরুসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র, ছাত্রীকে তাদের লেখালখির জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার আরো বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু কণ্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা অনেকের চক্ষুশূল। ফলে সাংবাদিকদের বলব, এই সরকারের আমাদের ক্যাম্পাসে যত ভালো কাজ আছে, বেশি প্রচার করবে।’
‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে ভালো কাজ করে থাকে, সেগুলোকেও প্রচার করবে।’
আমাদের যদি কোনো ভুলও, যেন পারস্পরিক পরামর্শ করে সংবাদে ভালোভাবে পরিবেশন করি। পরিবেশনের ক্ষেত্রে দায়িত্ববোধ যেন আমার ছাত্রদের মধ্যে থাকে।’
উপাচার্য আরো বলেন, ‘এর আগে সাংবাদিকতায় অনেকের পুঁথিগত বিদ্যাও ছিল না কিন্তু আমার ছাত্র, ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছে বলে আমরা সকলে গর্বিত। সাংবাদিকদের কাছে এই জাতির প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি অনেক বেশি। যদিও আমরা জানছি যে, সাংবাদিকতা এখন বিপদজনক পেশা ও গরীবের পেশা। সত্য বড় কঠিন। তারপরও তোমাদের সত্যই লিখে যেতে হবে। আমি প্রত্যাশা করছি, তোমাদের হাত ধরেই বিনির্মাণ হবে স্বপ্নের সোনার বাংলা।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘আমার যত ক্ষোভ, দুঃখ, আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ করার জায়গা ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা পরিবার ছিলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরা আমার ভাই, বোন। যখন ছাত্র ছিলাম, তখন ছাত্র, রাজনীতি করেছি ছাত্রলীগের। যখন সংসদ সদস্য হয়েছি, তখনো মনে করি, এই মতিহার চত্বরের সবাই আমার ভাই, আমার পরিবার।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা নিয়ে যে যেই পেশায় যাবেন, সেই পেশায় যেন সে সর্বোচ্চ জায়গায় যেতে পারে আমি দোয়া করি। তবেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম আসবে। একজন সাংবাদিক যদি এখানে তার লেখনীর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন, তবে সাংবাদিকতার অঙ্গনে অনেক মেধাবী জায়গা পাবেন। সাংবাদিককে শুধু সাংবাদিকতা শিখলে হবে না, তার অনেক জ্ঞানও থাকা দরকার।’
মূখ্য আলোচক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেছেন, ‘আমরা যারা সমাজ গবেষণার কাজ করি, আমাদের সবার চেয়ে বড় গবেষক সাংবাদিক। প্রতিনিয়ত সাংবাদিকরা বাস্তবতার ভেতরে থাকেন। লিখতে গিয়ে তাদের চিন্তা করতে হয়। বাস্তবতার কারণগুলো কী, কী- একজন সাংবাদিক যেভাবে জানেন, সেভাবে একজন সমাজ গবেষকও জানেন না। পর্যবেক্ষণ এবং কমিটমেন্টের ভুবনে সাংবাদিকেরা অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছেন। ক্রমাগতভাবে সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষণের জায়গাও সীমিত হয়ে আসছে। তাদের বেতন, ভাতা ও সুবিধা খুব কম। ফলে সাংবাদিকরা পর্যবেক্ষণের প্রতিভা হারিয়ে ফেলছেন। ঘটনার গভীরে ঘুরে তদন্ত করতে চাচ্ছেন না। যেভাবে চললে তাদের মালিকের সুবিধা হয়, যেভাবে চললে তাকে যে সকল প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন যারা, তাদের স্বার্থহানি না ঘটে, সেভাবে লিখতে তারা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। বিবেককে হত্যা করার জন্য সংবাদ মাধ্যমগুলো বাংলাদেশে ভূমিকা পালন যেন না করে।’ তখন উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সকল ছাত্র, ছাত্রী সাংবাদিক।
ওএফএস।