জাবিতে বাড়ছে মশার উপদ্রব, ডেঙ্গু আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা
বর্ষাকাল এলেই ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশার উৎপাত বাড়ে। এসময় এই মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ে। চারদিকে যখন ডেঙ্গু আতঙ্ক তখন জাবিতে নেই ডেঙ্গু সচেতনতায় কোনো উদ্যোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনের বেলায় ক্যাম্পাসজুড়ে মাত্রাতিরিক্ত মশার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর আবাসিক হলসহ সব জায়গায় ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ভন ভন করে উড়ছে। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছেন অনেকে।
পৃথিবীর উষ্ণতম অঞ্চলের দেশে মশাবাহিত রোগে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয় এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গুর বড় আঘাতের পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়।
সাধারণত জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এডিস মশার বিস্তার থাকে অনেক বেশি। রোগীর সংখ্যা বিচারে বছর ভেদে কম বেশি হয়। তবে প্রায় প্রতিবছরই দেখা যায়, আগস্ট-অক্টোবরে রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই সময়টাকে ডেঙ্গুর মৌসুমও বলা হয়।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করা ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থাকায় মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের বিভিন্ন সময় একাধিকবার মশক নিধন অভিযান হয়ে থাকলেও এ বছর তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে দিনের পর দিন মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে। সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে ডেঙ্গু আতঙ্ক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ‘হলের ক্যানটিন, ডাইনিং থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জায়গায় মশার উপদ্রব। এমনকি দিনের বেলা রুমের মধ্যে মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। দেশজুড়ে ডেঙ্গু জ্বরের যে বিস্তার ঘটেছে এতে আমাদের মধ্যেও ভয়ের কাজ করে কখন কার ডেঙ্গু হয়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ প্রজাতির মশা পাওয়া যায়। এর মধ্যে অ্যানোফিলিস, এডিস এবং কিউলেক্স উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে কিউলেক্স কুইনকুইফেসসিটাস প্রজাতি মশার উপদ্রব বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮ শতাংশ মশাই এ প্রজাতির।’
তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের এডিস এবং অ্যানোপ্লেক্স প্রজাতির মশা আছে তা দ্বারা ডেঙ্গু কিংবা ম্যালেরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম। ’
মশা দমনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ সময়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝোপ-ঝাড়, ডোবা-নালাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতি সপ্তাহে একবার করে নার্ভিসাইড প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিদিন ফগিং মেশিন ব্যবহার করলে মশার উপদ্রব অনেক কমবে।’
মশা দমনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করেনি বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (এস্টেট) মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ফগিং মেশিন ব্যবহার করছি। আমাদের লোকবল কম। যার ফলে সমস্যা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা হল এবং আবাসিক এরিয়াগুলোতে স্প্রে করছি। পর্যায়ক্রমে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্প্রে করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অনেকের জ্বর হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল ডেঙ্গু টেস্ট না করেই সাধারণ জ্বরের ওষুধ দিচ্ছে।
তবে এই অভিযোগটি অস্বীকার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. মো.শামসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা ডেঙ্গু টেস্ট করাচ্ছি। প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২১ আগষ্ট মার্কেটিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল হামিদ, গত বছরের ১৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাবাসসুম শাহীরাহ আকলিমা, ২০২০ সালের নভেম্বরে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রণজিৎ দাস সরকার এবং ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই ফার্মেসি বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী উখেংনু রাখাইন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
এসজি