‘জীবনের কাছে হার মেনে গেলাম’
লেখা ও ছবি : আসাদুল্লাহ গালিব
পাশ করে গিয়েছেন অনেক আগে। সোহাগ খন্দকার পড়তেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র অনুষদের ছাত্র ছিলেন।
২০০৮-’০৯ শিক্ষাবর্ষে অনেক আশা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন নামকরা চিত্রকর হবেন বলে। তিনি ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আজ সোহাগের মারা যাওয়ার খবর পৌঁছালো বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ও উত্তরবঙ্গের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
এই খবরে তার অনুষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. হীরা সোবহান খুব মন খারাপ করেছেন। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্র ও সাংবাদিক এই প্রতিবেদক খবরটি জানানোর পর বলেছেন, ‘আমি এই বিষয়ে মোটেও অবগত নই। তবে এ অত্যন্ত দুঃখজনক সংবাদ। যেকোনো মানুষের জন্য আত্মহত্যা কোনোভাবেই কোনো সমস্যা সমধানের পথ নয়। আমাদের সাবেক ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি শিক্ষক হিসেবে অনুরোধ, তোমরা কেউ কোনোদিন আত্মহনের পথ বেছে নেবে না।’
সোহাগকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন সবাই। সেহরির সময় রাত সাড়ে তিনটায় তাকে ডেকে সাড়া পাননি মা-বাবা, ভাই-বোনরা ও আত্মীয়, পরিজনরা। ততক্ষণে তাদের ডাকে ও ফেইসবুকের স্ট্যাস্টাসগুলো দেখে আশপাশের সমবয়সীরা তাকে বাসায় এসে ডাক দিতে লাগলেন। তবে কোনো সাড়া দিতে পারেননি তিনি।
সবাই মিলে তার শোবার ঘরের দরজাটি ভেঙে ফেলেছেন। তাদের সবার মন ভেঙে গেল, ফ্যানে গামছা বেঁধে ঝুলে আছেন নিথর নবীন চিত্রকর।
এরপরও বাঁচাতে নিয়ে গেলেন দ্রুত নীলফামারি জেলার সৈয়দপুর উপজেলার ৫০ শয্যার হাসপাতালে। তবে জরুরী বিভাগের চিকিৎসকরাও অনেক চেষ্টা করে প্রাণ ফেরাতে পারলেন না। তাকে মৃত ঘোষণা করলেন।
ছবি আঁকার স্বপ্নে বিভাগের সোহাগ খন্দকার অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করে-এমএফ (মাস্টার্স অব ফাইন আর্টস) লাভ করেছেন। তিনি থাকতেন তাদের পূর্বপুরুষের ভিটে নীলফামারি জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কয়ানিজপাড়া গ্রামে।
তার আগের আটটি ঘন্টা খুব খারাপ গিয়েছে সোহাগ খন্দকারের। মোট চারটি স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের বেদনাগুলোর কথা দফায়, দফায় বলেছেন তিনি।
‘ভালো থাকুক সেসব মানুষ, যারা শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। যার কাছে অন্যের গুরুত্ব নেই বললেই চলে।’
‘যদি কেউ আমার উপর কষ্ট নিয়ে থাকেন, আল্লাহর দোহাই আমাকে মাফ করে দেবেন।’
‘জীবনের কাছে হার মেনে গেলাম। আমি আর পারলাম না।’
‘একজন মানুষ যখন তার জীবনের কাছে যখন হেরে যায়, তখন তার আর করার কিছুই থাকে না।’
ওএস।