সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘সেরা ৫০’ মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানাবে
লেখা ও ছবি : জুনায়েদ খান, প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চট্টগ্রামের ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ-এ মুক্তিযোদ্ধাদের এই বিশেষ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে বিভাগটির প্রথম ও প্রধান এবং বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়।
এর আগে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান করে পালন করবেন ও তারপর টানা আয়োজন শুরু করবেন।
এভাবেই স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানমালার শুরু করবেন তারা। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আজ ২৩ মার্চ, বুধবার বিকেল চারটায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালযের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এম.এম. মনিরুল ইসলাম।
তাৎক্ষণিকভাবে তিনি তাদের নামের তালিকা ও পদবী প্রকাশ করেননি। অনুষ্ঠানের জন্য সবাইকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন রেজিস্টার স্যার।
এই আয়োজনের প্রধান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার এস. এম. মনিরুল ইসলাম বলেছেন, “২৫ মাচ, ১৯৭১ থেকে অপারেশন সার্চলাইটের গণহত্যার শুরুর দিন ২৫ মার্চ। এই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চত্বর’-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আত্মদান করা সব শহীদদের পূণ্যস্মৃতির উদ্দেশ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় মোমবাতি প্রজ্জলন কমসূচির আয়োজন করেছে।”
“২৫ মার্চ রাত নয়টা থেকে নয়টা এক মিনিট-এক মিনিটের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তার সব আলো নিভিয়ে দেবে। হবে ‘ব্ল্যাক আউট’।”
“রাত ১২টা ১ মিনিটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ’তে বিউগল বাজিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রামীদের স্মরণ করবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী সব মুক্তিযোদ্ধা, চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের জন্য সম্ভ্রম হারানো হব মা-বোন ও শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।”
“তারপর মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিফলকে সহকর্মীদের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানাবেন বাংলার অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। তিনি যাবেন তখন বঙ্গবন্ধু চত্বরে।’
‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া সব মানুষের আত্মার শান্তি কামনা করে; ছাত্র, ছাত্রীদের আত্নদানকে গভীর ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করতে, তাদের শান্তিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব মসজিদ, মন্দির, বিহারসহ সব প্রার্থনা গৃহে বিশেষ দোয়া, মোনাজাত, প্রার্থনার আয়োজন করেছে প্রশাসন।’
‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ও প্রশাসনিক কার্যালয়গুলো, অনুষদ ভবনসহ সব ভবনের ছাদে ২৫ মার্চ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পতাকা উড়তে থাকবে অনুষ্ঠানসূচি সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত।’
“চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ মার্চ সকালে ‘স্বাধীনতা র্যালি’র আয়োজন করবে।”
‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের গাঁথা তুলে ধরতে পরদিন আমাদের সারাদিনের আলোচনা, শহীদদের স্মরণে ও মুক্তির উৎসবের সাংস্কৃতিক কর্মসূচি থাকবে বরাবরের মতো।’
“আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা ও আলোচনা সভা হবে শহীদ আবদুর রব হল মাঠে। তার জন্য দোয়া ও মাহফিলের আয়োজন করা হবে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিপি, চাকসুর প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-শহীদ। এই মাঠেই বিশেষ কনসার্টে গাইবে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ব্যান্ড ‘মাইলস’ ও জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘শিরোনামহীন’।”
কেন এই বিরাট ও বিপুল অনন্য শ্রদ্ধাঞ্জলী-এই নিয়ে চট্টগ্রামের অন্যতম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মী, রাজনৈতিক অধিকারের নেতৃস্থানীয়-তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, ‘আমাদের চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা একে, একে চলে যাচ্ছেন। আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা যারা এখনো আমাদের মাঝে আছেন, তাদের বাংলাদেশ সরকারের গেজেটে আছেন ও ভাতা লাভ করেন-এই দুটি বিভাগে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিনয়ের সঙ্গে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাবো।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের কৃতি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, ‘আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সূর্য সন্তানদের এভাবে ভালোবাসা জানাতে পেরেছেন কি না আমার জানা নেই।’
তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান করে যাবো।’
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বিপুল সাংবাদিকের উপস্থিতিতে, যাদের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিভাগের ছাত্র, ছাত্রী- তাদের সামনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রেসক্লাবে আরো এসেছিলেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. বেনু কুমার দে, প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক ড. সজীব কুমার ঘোষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেলের পরিচালক ড. খায়রুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর পরিদর্শক শ্যামল রঞ্জন চক্রবর্তী প্রমুখ।
ওএস।