পুরোনোদের পদচারণায় মুখরিত প্রিয় ক্যাম্পাস
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষে পদার্পণ করেছে ২০২১ সালে। করোনা মহামারির কারণে গেল বছর সেভাবে শতবর্ষ উদযাপন করতে পারেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন শতবর্ষ উদযাপন করছে নানা আয়োজনে।
শনিবার (১২ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে পুরনো শিক্ষার্থীদের আগমণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শতবর্ষের অনুষ্ঠান। শতবর্ষের অনুষ্ঠানে শত শিল্পীর লাইভ অর্কেস্ট্রা সংগীত এবং নৃত্য পরিবেশনা হয়।
এদিন সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে যেতেই দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা। খেলার মাঠের মূল গেটে শতবর্ষের ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়। সেখানে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবকদের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীদের কার্ড দেখিয়ে মূল অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে হচ্ছে।
মূল অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেই দেখা যায় শত শত পুরনো শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা। কেউ এসেছেন সস্ত্রীক কেউবা একা একা এসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেছেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে অবসর গ্রহণ করা অনেক কর্মকর্তাকে এদিন দেখা যায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো প্রাণ চঞ্চল।
শতবর্ষের মিলন মেলা অনুষ্ঠানে কথা হয় সাবেক রাষ্ট্রদূত এবিএম আব্দুস সালাম এর সঙ্গে।
তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘শতবর্ষের মিলন মেলায় এসে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি। আমি রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গেছি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেছি কিন্তু আমাদের এই শতবর্ষের মিলন মেলা এক অন্য রকম। এমন সুন্দর অনুষ্ঠান আমি আগে দেখিনি। আমি অত্যান্ত আনন্দিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে বলব সম্ভব হলে বছর বছর এটা করা।’
প্রিয় ক্যাম্পাসের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে মাস্টার্স করেছি। ওই সময় আমি ড. পিসি দেব স্যার এর ছাত্র ছিলাম। তিনি অত্যন্ত প্রিয় প্রফেসর ছিলেন। তার সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্ত পাক হানাদার বাহিনী যখন তাকে মেরে ফেলে এটা আমার জীবনের সব চেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় মনে হয়। এটা আমি কোনো দিন ভুলতে পারি না।’
মিলন মেলা অনুষ্ঠানে পুরনো বন্ধুদের কাউকে পেলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পুরোনা বন্ধুদের খুব বেশি খুঁজে পাইনি। আমরা ১৯৬৬ সালে বেরেয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চিরতরে হারিয়ে গেছেন। তবে নতুন অনেক বন্ধু পেয়েছি, খুব ভালো লাগছে।’
আর একজন পুরনো শিক্ষার্থী বলেন, আজ ক্যাম্পাসে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমার প্রাণের উৎসব। স্বপ্নের জায়গা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে আসলেই মন খুশিতে ভরে ওঠে। পুরনো বন্ধুদের অনেককে খুঁজে পাচ্ছি। এখান আসার পর এত ভালো লাগছে বলে বোঝানো যাবে না।
এ কে এম আলাউদ্দিন নামের আর একজন শিক্ষার্থী সস্ত্রীক এসেছিলেন। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘পুরো আয়োজনটা খুব সুন্দর লাগছে। আমার কাছে মনে হয়েছে মিলন মেলা, একটা প্রাণবন্ত এক মেলা। আজকে অনেক আনন্দের, অনেক খুশির দিন।’
তিনি ১৯৭৮ সালে জীব বিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স করে বের হয়েছেন। আর তার স্ত্রীও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে বের হয়েছেন। দুজনই আনন্দঘন সময় পার করছেন।
শুধু আব্দুস সালাম বা আলাউদ্দিন নয়, এসেছিলেন পুরনো শত শত শিক্ষার্থী। অনেকে নিজের সন্তানকে নিয়ে এসেছেন। কেউবা নাতি পুতিদের নিয়েও এসেছেন ক্যাম্পাসে। পুরো অনুষ্ঠান স্থলে পুরনো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে ওঠে।
এক দিকে নিজেরা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন, অন্য দিকে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আরেক দিকে চলছে আলোচনা পর্ব। অনুষ্ঠানের শুরুতে গান ও নৃত্যের তালে তালে
উজ্জীবিত করে তোলে আগত অতিথিদের। আর ফাঁকে ফাঁকে চলে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা পর্ব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, প্রবীণতম শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মতিউল ইসলাম।
এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রকীবউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালমনাই অ্যাসোসিয়েশেনের সদস্য সচিব আশরাফুল হক মুকুল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার আর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য মুনিরা খান।
বাংলাদেশের পদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যলামনাই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল আলম চৌধুরী।
আলোচক হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ও ডাকসুর সাবেক জিএস এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, লেখক ও রাজনীতিক ইনাম আহমদ চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক হামিদা আখতার বেগম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদার, এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি মীর নাসির, সাবেক এমপি শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ।
এসএম/এমএমএ/