প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা
তবুও টিকে আছে লিটল ম্যাগ
প্রথাবিরূদ্ধ লেখকদের প্ল্যাটফর্ম লিটল ম্যাগ। যার হাত ধরে সময়ে সময়ে বেরিয়ে এসেছেন স্বনামধন্য অনেক লেখক। যদিও এই প্ল্যাটফর্মটিকে রীতিমত গাঁটের পয়সা খরচ করেই টিকিয়ে রাখছেন সম্পাদক-প্রকাশকরা। তবে তারা বলছেন, লিটল ম্যাগ প্রকাশ অব্যাহত রাখতে দরকার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। এ জন্য তারা ভারতের কলকাতার উদাহরণ দিয়ে বলছেন, সেখানে লিটল ম্যাগ যেমন সরকারি বিজ্ঞাপন পায়, আমাদের এখানেও তা দরকার। তাতে টিকে যেতে পারে লিটল ম্যাগ।
বলা যায় লিটল ম্যাগ কখনই লাভজনক ছিল না। এমনকি ব্রেক ইভেনে বা লাভ-ক্ষতিতে মুখোমুখি অবস্থানেও ছিল না। এ অবস্থাতেই যুগের পর যুগ সাহিত্যকর্মীর লিটল ম্যাগ প্রকাশ অব্যাহত রেখেছেন। তবে এখন একেবারে ‘টিকে’ থাকার কথা আসছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে লিটল ম্যাগের লেখক-সম্পাদক-প্রকাশকরা বলছেন, যারা যুগের পর যুগ লাভ-ক্ষতির হিসেব না কষে এটি প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন, সেখানে তাদের আবেগের একটি জায়গা আছে। তবে তাদেরও তো বয়স বাড়ছে। তাদের অবর্তমানে পরবর্তী প্রজন্ম এটি অব্যাহত রাখা বা না রাখার সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের মতো পরবর্তী প্রজন্মও একই আবেগ নিয়ে তা অব্যাহত রাখবে, এই নিশ্চয়তা তো দেওয়া যায় না। আর রাখতে চাইলেও সবার আর্থিক সাধ্য তো সমান না। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনই ব্যবস্থা নিলে টিকে যেতে পারে লেখকদের আঁতুড় ঘর হিসেবে বিবেচিত লিটল ম্যাগ।
অবশ্য ভিন্ন মতও সক্রিয় আছে। লিটল ম্যাগকে যারা আন্দোলন মনে করেন তাদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা মানেই নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু লিটল ম্যাগ আন্দোলনের চেতনাই হচ্ছে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না থাকা, প্রথা ভেঙ্গে এগিয়ে যাওয়া।
সার্বিক বিষয়ে শুক্রবার (৪ মার্চ) অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লিটল ম্যাগ চত্বরে কথা হয় ‘লিরিক’ সম্পাদক এজাজ ইউসুফীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে এটি বের করছি। নিজের গাঁটের টাকায় প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের এখানেও লিটল ম্যাগে পশ্চিমবঙ্গের মতো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার ‘
প্রিণ্ট পত্রিকারও পাঠক কমেছে। পাঠক ধরে রাখতে পত্রিকাগুলো অনলাইন ভার্সন করছে। -এ উদাহরণের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, অনলাইন মাধ্যম করার মতো আর্থিক সামর্থ তো সবার থাকে না। এটি তো ব্যয় সাপেক্ষ বিষয়।
‘শালুক’ সম্পাদক ওবায়েদ আকাশ বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির এই সময়ে সহজে জনপ্রিয়তা পাওয়ার নানা মাধ্যম আছে। মানুষ সেদিকে ছুটছেও। এর মধ্যেও বেশ কিছু নতুন পত্রিকা এবার এসেছে। কিন্তু লিটল ম্যাগকে টিকিয়ে রাখতে হলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর ৮ সম্পাদককে লিটল ম্যাগাজিন সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন ওবায়েদ আকাশ। বিষয়টিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন তিনি। বলেন, লিটল ম্যাগ যেন সরকারি বিজ্ঞাপন পায় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তাছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরও উচিত লিটল ম্যাগে বিজ্ঞাপন দেওয়া।
লিটল ম্যাগ চত্ত্বরের স্টলে বিভিন্ন ধরনের বই থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে এতে মনে হয় বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষেরও কিছু করার থাকে না। কারণ স্টল বরাদ্ধের জন্য মন্ত্রী পর্যন্ত ফোন করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের দিকে ওবায়েদ আকাশসহ দুই-একজন বাংলা একাডেমির বহেড়া তলায় লিটল ম্যাগ নিয়ে নিজ উদ্যোগে বসতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে মেলায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৬ সাল থেকে বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্টল বরাদ্দ দেওয়ার মতো লিটল ম্যাগ-এর জন্যও স্টল বরাদ্দ দেওয়া শুরু করে। মেলা বাংলা একাডেমি চত্বর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছড়িয়ে পড়লে ২০১৯ সালে লিটল ম্যাগও চত্বরও বড় পরিসরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে আসা হয়।
এমএ/এসআইএইচ