বইমেলায় আসছে না ৭৯ প্রকাশনী
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আয়োজিত বইমেলা নিয়ে প্রকাশকদের আগ্রহ কমছে। গতবারের মেলায় অংশ নিয়েছিল এমন ৭৯টি প্রতিষ্ঠান এবার মেলায় অংশ নিচ্ছে না।
এবার বইমেলায় অংশ নেওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়ে আবেদন করেছে ৪৬১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। গত বছর মেলায় অংশ নিয়েছিল ৫৪০টি প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ ৭৯টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবার মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদনই করেনি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত বছরও নির্ধারিত সময় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু করা হয়নি। শুরু হয়েছিল ১৮ মার্চ নির্ধারিত সময়ের দেড় মাস পর। এবার বইমেলা দুই সপ্তাহ পিছিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরুর প্রস্তুতি চলছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালেও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ ছিল কম। বইমেলার পরিসংখ্যান বলছে, মেলার ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ৫৬০টি অংশ নিয়েছে ২০২০ সালে। ২০২১ সালে অংশ নিয়েছে ৫৪০টি, আর এবার অংশ নিচ্ছে ৪৬১টি প্রতিষ্ঠান।
২০২০ সালে প্যাভেলিয়ন ছিল সর্বাধিক ৩৪টি। গত বার ছিল ৩৩টি; ইত্যাদি প্রকাশনা সংস্থা মেলা অংশ নেয়নি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরে বিশেষ বিবেচনায় নতুন একটি প্রতিষ্ঠান প্যাভেলিয়ন বরাদ্দ পেয়েছিল। এবার প্যাভেলিয়ন পাচ্ছে ৩১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, বাংলা একাডেমির প্যাভেলিয়ন থাকছে ৩টি। বিগত সময়ে প্যাভেলিয়নে অংশ নেওয়া উৎস প্রকাশন এবার প্যাভেলিয়ন নিচ্ছে না। উৎস প্রকাশনের সত্ত্বাধিকারী মোস্তফা সেলিম জানিয়েছেন, গত বছর মেলায় স্টল নির্মাণ ও পরিচালনায় যে টাকা ব্যয় হয়েছে তা সে পরিমাণ টাকার বই মেলায় বিক্রি হয়নি। এ কারণে এবার তিনি প্যাভেলিয়ন বাদ দিয়ে ৩ ইউনিটের স্টল নিয়েছেন।
গতবছর এক ইউনিটের স্টল ছিল ২৮৬টি, এবার হচ্ছে ২৭০টি; দুই ইউনিটের স্টল পেয়েছিল ১৪১টি প্রতিষ্ঠান, এবার পাচ্ছে ৯৫টি প্রতিষ্ঠান; গত বছর তিন ইউনিটের প্রতিষ্ঠান ছিল ৫৪টি, এবার ৩৯টি; চার ইউনিটের প্রতিষ্ঠান ছিল ২৬, এবার সমসংখ্যক প্রতিষ্ঠানই থাকছে।
প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, প্রথমত- বইমেলা শুরুর সময় নিয়ে অনিশ্চয়তা, দ্বিতীয়ত- মেলা শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতিতে কেমন জমবে এ নিয়ে অনিশ্চয়তায় এবার মেলা নিয়ে প্রকাশকদের আগ্রহ কম। এ ছাড়া, গত বছর মেলা প্রকাশকদের জন্য লাভজনক হয়নি। মেলায় অংশগ্রহণের পেছনে যে টাকা ব্যয় হয়েছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই সে পরিমাণ টাকার বই বিক্রি করতে পারেনি।
গত মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমিতে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কর্মকর্তাদের বৈঠকের প্রস্তাব অনুসারে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মেলা কমিটির সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ জানিয়েছেন, শারীরিক উপস্থিতিতে মেলা আয়োজনের লক্ষ্যে সব রকমের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যদিও মেলা শুরুর তারিখ ও সময়কাল সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত হবে।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের স্টল বিন্যাসের পরিকল্পনায় এবার পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়েছেন স্থপতি এনামুল কবির নির্ঝর। ঢাকাপ্রকাশকে তিনি জানান, গত বছর প্যাভেলিয়নগুলো একদিকে ছিল। এবার প্যাভেলিয়ন ও স্টল পাশাপাশিই থাকবে। পাঠক ও দর্শনার্থীরা এক দিকে না ঝুঁকে যাতে সব দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতে পারেন সেটা বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
বায়ান্ন’র মহান ভাষাশহিদদের স্মরণে প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির আয়োজনে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছর এই বইমেলা উদ্বোধন করে থাকেন।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির গত ২৫ জানুয়ারির সভা থেকে একুশে বইমেলা আরও কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন : বইমেলার সময় বাড়ছে না, উদ্বোধন ১৫ ফেব্রুয়ারি
এপি/কেএফ/