‘পলিটিক্যাল পার্টিস ইন ইনডিয়া’রমোড়ক উন্মোচন
‘অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সাহস ছিল সত্য বলার’
‘অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সাহস ছিল সত্য বলার। তিনি জীবনভর সত্য বলে গেছেন। তার এই বইটিতেও তিনি যে সত্য বলে গেছেন সেগুলো হজম করা কঠিন। এমনকি এখনো বাংলাদেশে যে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি চলছে সেখানেও এই বই হজম করা যাবে না।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর বেঙ্গল শিল্পালয়ে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের ‘পলিটিকাল পার্টিস ইন ইন্ডিয়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘পলিটিকাল পার্টিস ইন ইন্ডিয়া’ বইটি মূলত অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের পিএইচডি থিসিস যেটি তিনি ডিগ্রির জন্য আর শেষ পর্যন্ত জমা দিয়েছিলেন না। ৭২ বছর পর বইটি প্রকাশিত হলো।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক রওনক হাসান বলেন, যারা এই থিসিসটি পড়বেন তাদের মনে হবে রাজ্জাক স্যার হয়তো আরও লিখতে চেয়েছিলেন। আমার কাছে অন্তত তাই মনে হয়েছে। সময়ের অভাবে একটা কনক্লুডিং চ্যাপ্টার হয়তো দিতে পারেননি। মনে হবে তিনি হয়তো ৩০ বা ৪০ এর দশক পর্যন্ত লিখতে চেয়েছিলেন।
তারপরও আজকের ছাত্রদের কাছে কী কী বিষয় শিক্ষণীয় হতে পারে জানিয়ে রওনক হাসান বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর বৈশিষ্টগুলোর ঘাটতি তিনি যা বলেছিলেন তার এখনো প্রযোজ্য। বিশেষ করে স্যারের লেখার ধরন ও মেথডলজি নিয়ে শিক্ষা নিতে পারেন আজকের শিক্ষার্থীরা।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক পিএইচডি থিসিস হিসেবে লেখা শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি ডিগ্রি না নিয়ে ফিরে এসেছিলেন। এটা নিয়ে নানান কিংবদন্তী আছে। এর মধ্যে ১৯৫০ সালে তার সুপাইভাইজার হ্যারল্ড লাস্কি মারাও যান।
বইটি এত বছর কেন প্রকাশিত হয়নি প্রশ্ন করে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ নিজেই জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, অধ্যাপক রাজ্জাককে ঘিরে যারা ছিলেন তাদের পক্ষে এই বইয়ের বক্তব্য হজম করা সম্ভব ছিল না।
বইটির বাংলা অনুবাদ প্রয়োজন মন্তব্য করে সলিমুল্লাহ খানব বলেন, বইটি ইংরেজিতে বেড়িয়েছে। সুন্দর ইংরেজি। আমাদের কর্তব্য এটিকে বাংলায় করা। এমন বাংলা যেটা রাজ্জাক সাহেব পড়লে খুশি হতেন। কিন্তু এমন লোক আমদের নেই।
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সাহস ছিল মন্তব্য করে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানব বলেন, এখনো বাংলাদেশে যে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি চলছে সেখানেও এই বই হজম করা যাবে না। রাজ্জাক সাহেবের সাহস ছিল। পানি সমস্যা নিয়েও প্রথম তিনিই কথা বলেছিলেন। ভয় করতেন না।
রাজ্জাক সাহেবের বই বোঝার মতো লোক নাই বলে বই প্রকাশ হয়নি মন্তব্য করে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, বইটির চ্যাপ্টারে চ্যাপ্টারে সত্য কথা আছে। এই বই নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া উচিত। এই বই গ্রহণ করার মতো বয়স আমাদের হয়নি। অন্তত জাতিগতভাবে হয়নি।
লেখক ও রাজনীতিক বদরুদ্দিন উমর বলেন, বইটিতে ধরাবাহিকভাবে বর্ননা করা হয়নি। কিন্তু তিনি যা করেছেন তা আরও বেশি। আশা করি এটি ব্যাপক পঠিত হবে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, বইটি যিনি হাতে নেবেন তিনি পড়ে বলবেন বইটি কেন এতদিন প্রকাশ হলো না। এটি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) প্রকাশ করেছে। খুবই সুন্দরভাবে করেছে তারা। এটি খুবই দুরুহ কাজ ছিল। এতবছর পর খুব নিষ্ঠার সঙ্গে কাজটি করা হয়েছে।
ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ওই সময় আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম তখন অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের ইমেজ ছিল ট্রুলি ডেডিকেটেড টিচার। সত্যিকার অর্থে তিনি জ্ঞানের চর্চা করতেন এমন মিথ থেকেই তাকে দেখেছি আমরা।
এই বইটি যখন তৈরি হচ্ছে তখন আমার ঘনিষ্ট বন্ধু আহরার আহমেদের নিষ্ঠার বিষয়টি আমি জানি এমনটা উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম বলেন, ৭২ বছর পর বই প্রকাশ একটি অনন্য ঘটনা। ইনটেলেকচুয়ালি মাইলস্টোন।
বইটাকে কেন্দ্র করে আমরা অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে পুনরায় আবিস্কার করব এমন মন্তব্য করে মাহফুজ আনাম বলেন, আমরা যারা উনাকে কম জানি এটা আমাদের একটা প্রেরণার ব্যপার। এটি পাঠ করে আমরা যেন উনাকে জানার চেষ্টা করি। অনেক কথা উনি বলেছেন যেটা অনুধাবন করার মতো জ্ঞান আমাদের নেই।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, আমার বন্ধু মফিদুল হক একটি বই লিখতে পারেন রাজ্জাক স্যারের ওপর। তাহলে আমরা তাকে আরও জানতে পারব। যেভাবে আহমদ ছফা লিখেছেন ‘যদ্যপি আমার গুরু’। এটা আবুল খায়ের লিটু বা আমিও প্রকাশ করতে পারি। অধ্যাপক রাজ্জাক শিক্ষকদের শিক্ষক ছিলেন। বড় বড় বই না লিখেও তিনি অনেককে বুদ্ধিবৃত্তি ও জ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অধ্যাপক রেহমান সোবহান, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, ইতিহাসবিদ ও লেখক মুনতাসীর মামুন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাক হিলস স্টেট ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস অধ্যাপক ও জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক অধ্যাপক আহরার আহমদ, জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ আবুল খায়ের লিটু প্রমূখ বক্তৃতা করেন। বক্তাদের মধ্যে কেউ সরাসরি আবার কেউ অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্রুখ মহিউদ্দীন।
আরইউ/