গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান থেকে বহিষ্কার
মামলা করবেন কামাল বায়েজীদ
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেলের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়াকে সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী বলে দাবি করেছেন কামাল বায়েজীদ। অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দিয়ে তা গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশের ফলে পরিবার ও সমাজের কাছে সম্মানহানি হয়েছে, এ জন্য আদালতে মামলা করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা ২২ জানুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত তিন বছরে ব্যয় হওয়া ১ কোটি ২৪ লাখ ৫১ হাজার ৩৭৩ টাকার হিসাব দিতে পারেননি কামাল বায়েজীদ। এ ছাড়া জনতা ব্যাংকে সংগঠনের অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১৯ সালে নিজের অ্যাকাউন্টে সংগঠনের টাকা স্থানান্তর করেন তিনি, এগুলোসহ ২৯টি অভিযোগ কামাল বায়েজীদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে সম্পাদক (অর্থ) রফিক উল্লাহ সেলিমকে কেন্দ্রীয় পরিষদকে অর্থের হিসাব বুঝিয়ে না দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বহিষ্কার ও তার সংগঠনের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়।
বিস্তারিত পড়ুন : গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি ও সম্পাদক-অর্থকে বহিষ্কার
সংবাদ সম্মেলনে কামাল বায়েজীদ লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পরে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় রফিক উল্লাহ সেলিমও উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার ৬২ বছরের জীবনের ৪৫ বছর নাট্যজীবন। এই ৪৫ বছরের নিবেদিত শিল্পী জীবনে আমি জ্ঞানত কোন অন্যায় করিনি। কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি। কোন আর্থিক অনাচারের সাথে নিজেকে যুক্ত করিনি। তহবিল তসরুফ ও অর্থ লোপাটের মত ঘৃণ্য কাজ সব সময় ঘৃণা করেছি। সেই আমাকে সংগঠনের অর্থ লোপাটের মত ঘৃণ্য অপরাধে অপরাধী করে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করার প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হচ্ছি।
কামাল বায়েজীদ বলেন, ‘আমার ও আমাদের অর্থ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ২৯টি অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেগুলো কী জানি না। কারা এতে সই করেছেন তাও জানা নেই। আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার কোনও কাগজও পাইনি। এই ফেডারেশন একটি সংবিধান অনুযায়ী চলে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। কিন্তু কোনও অভিযোগের বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি। আমি আইনি অ্যাকশনে যাবো।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘করোনাকালে কর্মীদের সাহায্যের জন্য চেয়ারম্যান (লিয়াকত আলী লাকি) আমার সই ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। আমরা জানতে পেরেছি সেই সাহায্য এসেছে। কিন্তু সেই অর্থ বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটারের কোনও অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। কোনও নথিতেও নেই। চেয়ারম্যান কাকে এই অর্থ দিয়েছেন সেটারও হিসাব নেই। আমি হিসাব দিতে বলেছিলাম, কিন্তু দেওয়া হয়নি।’
বায়েজীদ বলেন, ‘লাকী (লিয়াকত আলী লাকী) ভাই যেটা করেন, তার মর্জি মাফিক কিছু না হলেই তিনি হিংস্র হয়ে যান, কিন্তু এ হিংস্রতা শেষ পর্যন্ত রক্ষা করে না। লাকী ভাইয়ের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’
বায়েজীদ জানান, তার ব্যক্তিগত ধারণা, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী তার ওপর রেগে আছেন এবং সে কারণে তার ও সেলিমের সঙ্গে এমন কাজ করছেন।
বায়েজীদ বলেন, ‘গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনে একজন একটি পদে পরপর তিনবারের বেশি নির্বাচন করতে পারেন না। আমি এ কথাটি লাকী ভাইকে বলেছি। এ ছাড়া শিল্পকলায় তিনি প্রায় ১২ বছর ধরে রয়েছেন। সম্প্রতি তার দুর্নীতির খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলে আমি একটি সভায় তাকে বলেছিলাম, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সম্মানে আপনার কিছুদিন পদ থেকে বিরত থাকা উচিত, তাহলে আমরা অনেক বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংগঠনটি বিভিন্ন অনুদান ও সদস্যদের চাঁদায় চলে। আমরা ৬৪টি জেলায় নাট্যোৎসব করেছি। মন্ত্রণালয় থেকেও বিভিন্ন সময় অনুদান দেওয়া হয়। দায়িত্ব গ্রহণের সময় মাত্র ৭৪ টাকা ছিল। আমরা সাড়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কাজ শুরু করি। সেখানে এখন ৩৩ লাখ টাকা রয়েছে। এটা তো আমার ব্যক্তিগত টাকা নয়। এটি দেশের প্রত্যেক নাট্যকর্মীর। আমি এই টাকাগুলো এফডিআর করে রাখতে বলেছিলাম।’
বায়েজীদ বলেন, ‘আমার ধারণা এই দুটি কারণে লিয়াকত আলী লাকি আমার ওপর রেগে আছেন এবং এমন মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাদের দিকে বিভিন্ন দোষ দিতে চাচ্ছেন।’
বায়েজীদ জানান, সারা দেশের থিয়েটার সংগঠনগুলোকে নিয়ে কনভেনশন করবেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনকে সাজানো হবে। তিনি গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রামেন্দু মজুমদার ফেডারেশন নিয়ে যে আশঙ্কা ও ভাবনার কথা জানিয়েছেন তার প্রতি সমর্থন জানান।
এ সম্পর্কে আরও পড়ুন : গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের কার্যক্রম স্থগিতের আহবান রামেন্দু মজুমদারের
সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদক (অর্থ) রফিক উল্লাহ সেলিম তার নামে যে অভিযোগ, সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে ২০১৮ থেকে ২০ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী সবার সামনে পেশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি যে ঠিক আছি, এই বিবরণী তার প্রমাণ। আর মিটিংয়ে আমাকে হিসাব দাখিলের সুযোগ দেয়া হতো না।’
এ সম্পর্কে আরও পড়ুন :অভিযোগের জবাব দিতে আসছেন কামাল বায়েজীদ
এমএ/এপি