পদ্মশ্রী সম্মান প্রত্যাখ্যান করলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’, ‘মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা’, ‘কী বৃষ্টি দেখো মিষ্টি কী বৃষ্টি এ সকাল’, ‘জানি না ফুরোবে কবে এই পথ চাওয়া’, ‘আকাশের অস্তরাগে’ এমন বহু মনোমুগ্ধকর গান বেরিয়েছে তার গলা থেকে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর শিষ্য। পরে গান শিখেছেন বড়ে গুলাম আলি খাঁর কাছে। উল্লেখ্য, পঞ্চাশের শতকে উত্তম-সুচিত্রার ছবিতে সুচিত্রা সেনের ঠোঁটে সন্ধ্যার গান ছিল প্রায় অপরিহার্য। তার স্বামী প্রয়াত গীতিকার শ্যামল গুপ্ত। এবার ভারতের কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করলেন প্রবাদপ্রতিম এই সংগীত শিল্পী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) এ খবর জানিয়েছে।
বয়স পেরিয়ে গিয়েছে নব্বই। একাধিক ভাষায় গেয়েছেন অজস্র গান। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঙালি শুনে এসেছে তাঁর গান। বহু বছর আগে একবার সংগীত প্রতিযোগিতায় তিনি 'গীতশ্রী' পুরস্কার পেয়েছিলেন। এরপর থেকেই তার নামের সঙ্গে জুড়ে যায় ‘গীতশ্রী’ শব্দটি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া বহু পুরস্কার পেয়েছেন; কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনো পুরস্কার পাননি। এবার তিনি কেন্দ্রের এ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এ প্রসঙ্গে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পরিবার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি জানান, দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সচিবালয় থেকে তাকে ফোন করা হয়েছিল। তিনি তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তার মতো একজন বর্ষীয়ান শিল্পীর জন্য পদ্মশ্রী সঠিক সম্মান নয়। তার থেকে অনেক কম বয়সী শিল্পীরা এই সম্মান পেয়েছেন। সুতরাং এখন যদি তিনি এই পুরস্কার গ্রহণ করেন, তাহলে তা হবে অপমানিত করা। সুতরাং তার আর পদ্মশ্রীর কোনো দরকার নেই। শ্রোতাদের প্রশংসাই তার কাছে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।
এ ছাড়াও মোদি সরকারের দেওয়া ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছেন পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। শিল্পী জানান, গতকাল সকালে তাকে সরকারি কর্মকর্তারা ফোনে জানায় তাকে পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়া হবে। কিন্তু এই বক্তব্যের পরই শিল্পী নিজে সেই সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। কারণ তার ১৫ বছর আগে এই সম্মান পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। তাই এতদিন পর এই সম্মান দেওয়ার কোনো অর্থ নেই বলেই জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও প্রবীণ সিপিআইএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পদ্মভূষণ পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি এই পুরস্কার নিয়ে কিছুই জানি না। এ বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। যদি তারা আমাকে পদ্মভূষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তাহলে আমি তা প্রত্যাখ্যান করছি।’
বুদ্ধদেবের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য বলেন, ‘বুদ্ধদেব শারীরিকভাবে দুর্বল হলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আগের মতোই দৃঢ়চেতা ও সবল রয়েছেন। সেভাবেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পদ্মভূষণ ফিরিয়ে দেওয়ার।’
এসএ/