শিক্ষাক্রম: স্বপ্ন ও সামাজিক রূপান্তর
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণীত ও ২০২৩ সাল থেকে তা চালু হয়েছে। শুরু হয়েছে সকল স্তরে এ শিক্ষাক্রম বিস্তরণ ও শিক্ষক-প্রশিক্ষণ। অনেকদিন অপেক্ষার পর নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি হলো। এ অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছে পাঠক্রম। এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং উন্নত শিক্ষা। ফলে খুব জরুরি ছিল এ শিক্ষাক্রম। এসব কার্যক্রমে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারই বাস্তবায়িত হচ্ছে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমন্বিত, সর্বজনীন শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আমরা সব ভুলে যাই। আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণীত ও এর বাস্তবায়ন চলমান। যে শিক্ষানীতিতে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কথা বলা হয়। এর আলোকেই নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়েছে। সমকালীন বিশ্ব, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, প্রযুক্তির অগ্রগতি ও জাতীয় চাহিদা সমন্বিত করে এ শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছে। এ অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বর্তমান সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এসব কার্যক্রমের লক্ষ্য জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় সামাজিক রূপান্তর।
শিক্ষার মানোন্নয়নে এ-শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প নেই। তা বাস্তবায়ন করতে গেলে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সকলকে শিক্ষাক্রম ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সচেতন হওয়া, জানা বোঝা অতীব জরুরি। এক্ষেত্রে সৈয়দ মো. গোলম ফারুক রচিত ‘নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকের ভূমিকা (২০২৩)’ অতি দরকারি একটি গ্রন্থ। প্রণীত এ-শিক্ষাক্রম বোঝাপড়ায় অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। কারণ শিক্ষাক্রম চালু হলেও এ বিষয়ে তথ্যসমৃদ্ধ, ব্যাখ্যামূলক কোনো বিশ্লেষণ এখনো নজরে পড়েনি। যেক্ষেত্রে বাজারি আলোচনাসমূহ একান্তই নিরর্থক। বস্তুত নতুন শিক্ষাক্রমের ভিত্তি আলোচনায় যা বলা হয়েছে, এসব বিষয়ে গোলাম ফারুক গুরুত্ব দিয়েছেন। এর আলোকে তিনি উল্লেখ করেছেন কিছু সমাধানসূত্র।
স্মরণীয় জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ বলা হয়েছে, ’শিক্ষার মূল প্রাণবিন্দু শিক্ষাক্রম।...মূলত শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষতা ও কাঙ্ক্ষিত আচরণিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি দক্ষ, দেশপ্রেমিক, আত্মনির্ভরশীল, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন, শ্রমনিষ্ঠ সুনাগরিক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলাই শিক্ষার লক্ষ্য। তাই শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তকের গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের উপযোগী শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে। আর সেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির আলোকেই রচিত হবে পাঠ্যপুস্তক। পুস্তক প্রণয়নের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা হবে যে প্রকৃত শিক্ষা যেন জীবনঘনিষ্ঠ হয় এবং তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত করে এবং চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি, অনুসন্ধিৎসা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে সহায়ক হয়।’ (২০১০: ৬০) এর উপর ভিত্তি করে শুরু হয় শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, যা এ বছর থেকে চালু হলো। এ নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখার কিছু বক্তব্যও পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।
‘একবিংশ শতাব্দীর তথ্য ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেরকম
নাগরিক তৈরিতে হিমশিম খাচ্ছে সনাতনী শিক্ষাব্যবস্থা। কারণ এই সনাতন মুখস্থ ও পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল আজ থেকে তিনশত বছর আগের তৎকালীন সমাজের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজন মেটানোর জন্য, এরপর শিক্ষা-কাঠামোর গুণগত পরিবর্তন হয়েছে খুব কমই। এখন প্রয়োজন এমন শিক্ষাব্যবস্থা, যা নমনীয়, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম এবং উদ্ভূত আর্থসামাজিক প্রয়োজনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন চলমান পুরোনো সমস্যার টেকসই সমাধান, আর নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার চেষ্টা ও আত্মবিশ্বাস।’ এ রূপরেখার অনুরূপ স্বরই উচ্চারিত হয়েছে সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক রচিত গ্রন্থে।
গ্রন্থভুক্ত লেখাগুলো বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত গ্রন্থটি তিনটি অধ্যায়ে বিভাজিত: নতুন শিক্ষাক্রম; নতুন শিক্ষাক্রম ও প্রযুক্তি এবং শিক্ষকের ভূমিকা। তিনটি অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে ৪৫টি প্রবন্ধ। সাম্প্রতিককালে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট এরূপ কোনো বই প্রকাশিত হয়েছে বা আছে বলে আমাদের জানা নেই। বস্তুত বৈশ্বিক প্রেক্ষিত ও দ্রুত পরিবর্তনশীল অবস্থার পর্যবেক্ষণে লেখক বলেছেন, ‘শুধু পেশারই পরিবর্তন হবে তা কিন্তু নয়; সমাজ, রাষ্ট্র, পারিবারিক সম্পর্ক, দেশের সীমানা, সাইবার মাইগ্রেশন, জেন্ডার আইডেন্টিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে ইন্দ্রিয় অনুভূতির মতো ক্ষেত্রেও বড়ো ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। এত সব পরিবর্তনের ধাক্কা সামলানোর জন্য যে মাত্রার মানসিক নমনীয়তা প্রয়োজন সেটা আমাদের নেই। তার চেয়ে বড়ো কথা এই মানসিক নমনীয়তা তৈরি করার জন্য যে নতুন শিক্ষাক্রমের কথা বলা হচ্ছে সেটা গ্রহণ করার মতো মানসিক ধারণ ক্ষমতাও তৈরি হয়নি এখনো।’ (২০২৩ : ২২)
ফলত শিক্ষাক্রম জানাবোঝা ও বৈশ্বিক শিক্ষাচিন্তার বিবিধ প্রসঙ্গ জানতে এ গ্রন্থটি অত্যন্ত সহায়ক। শিক্ষাক্রম বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে এ বইটি ব্যতিক্রম। গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধগুলোর শিরোনাম ও পাঠকৃতির ভাষা খুব আকৃষ্ট করে। বিশেষত সাধারণ পাঠক খুব আনন্দের সঙ্গে পাঠ ও অনুধাবন করবেন বলে আমাদের ধারণা। শিক্ষাক্রম ও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক শিক্ষাতত্ত্ব এবং তথ্য অতি সহজবোধ্য ভাষায় লেখক উপস্থাপন করেছেন। তার লেখা থেকে চলমান শিক্ষাক্রমের কিছু বৈশিষ্ট্য আমরা শনাক্ত করি। সেগুলো হলো: (ক) কোমল দক্ষতা অর্জনই হবে লক্ষ্য, (খ) উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকরা অনুকরণ করে গবেষণা প্রবন্ধ না লিখে সৃজনশীলতায় আগ্রহী হবেন, (গ) শিক্ষার্থীরা মুখস্থ প্রক্রিয়ায় শিখবে না, বাস্তব জীবন থেকে সমাধানের পথ নিজেরাই খুঁজে নেবে, (ঘ) শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হবে আত্মবিশ্বাস, (ঙ) নিশ্চিত হবে শিক্ষকের যোগ্যতা ও মর্যাদা, (চ) শিক্ষার্থীরা দক্ষতার অর্জনের সঙ্গে জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে, (ছ) শিক্ষার্থীরা হবে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ, ঐতিহ্য সচেতন ও বিশ্বনাগরিক, (জ) প্রতিযোগিতায় অন্ধত্বের বিপরীতে শিক্ষার্থীরা অর্জন করবে সহযোগিতামূলক দক্ষতা। এসবই এ-শিক্ষাক্রমের মৌল ভাষ্য।
প্রসঙ্গত, হাওয়ার্ড গার্ডেনারসহ অনেকেই বলেছেন, মানুষের মধ্যে আছে বহুমাত্রিক বুদ্ধিমত্তা। এর বিকাশে নতুন শিক্ষাক্রমে টুলস ও পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও এতে ‘ইভালুশনারি মানবতাবাদে’র মূল্যবোধ, নৈতিকতা, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সৃজনশীলতা, সূক্ষ্ম চিন্তনদক্ষতা, যোগাযোগ দক্ষতা, সহমর্মিতা ইত্যাদির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, বাণিজ্যপুঁজির বিকাশ, নিওলিবারেলিজমের দুনিয়াতে প্রযুক্তি নির্ভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেক শক্তিশালী। আমরা যদি দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য অর্জন এবং আয়ত্ত করতে পারি, তাহলে প্রতিযোগিতাময় এ বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারব। ফলে শিক্ষাক্রমে এ বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের মতো দেশে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। লক্ষণীয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সকল সদস্যেরই আসক্তি
ক্রম-বর্ধমান। এখন প্রশ্ন হলো, প্রযুক্তি নির্ভর বিচিত্র মাধ্যমের অস্বাভাবিক ব্যবহার মানুষের সৃজনশীলতা গ্রাস করবে কি না। যেক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার ও নির্ভরতা টক্সিন-এর মতো হয়ে উঠেছে। সেক্ষেত্রে লেখক ইউভাল নোয়া হারারি ও এডওয়ার্ড উইলসনের যুক্তির দ্বারস্থ হয়েছেন। প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া এ মুহূর্তে বিকল্প নেই। তবে সতর্ক বার্তাও তিনি রেখেছেন, ‘... আপনাকে হয় প্রযুক্তির লাগাম টেনে ধরতে হবে, না হয় আপনার শত সহশ্র্র বৎসরের সাধনার ধনকে বিসর্জন দিতে হবে। এখন কী করবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও কিন্তু সীমিত। কিছুদিন পর আপনি চাইলেও আর প্রযুক্তির লাগাম টেনে ধরতে পারবেন না। একবার সময় চলে গেলে ‘মানুষ’ হিসেবে আপনার আর সাধন হবে না।’ (২০২৩ : ১০৯)
হারারি সম্প্রতি বলেছেন এ শতাব্দীর মধ্যে শ্রমঘন শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স মানুষের স্থান দখল করে নেবে। যা ইতিমধ্যে কিছুটা লক্ষ করছি। এক্ষেত্রে হয়তো নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। তবে এজন্য অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। মানুষ যদি শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষতা অর্জন না করতে পারে, তা হলে অপ্রাসঙ্গিক হওয়াই স্বাভাবিক। যেক্ষেত্রে তৈরি হবে বিশাল এক কর্মহীন শ্রেণি। এ অবস্থায় কোমল দক্ষতাসমূহ অর্জন বিচ্ছিন্নভাবে সম্ভব নয়। পরস্পর সহযোগিতার হাত বাড়াতেই হবে। কথা যেহেতু শিক্ষা নিয়ে, অতএব স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, এ শিক্ষাক্রমে শিক্ষকসমাজের ভূমিকা কী। লেখকের সুপারিশ হলো, প্রতি শিক্ষককে অবশ্যই সমকালিক দক্ষতা অর্জনের সঙ্গে মর্যাদা সচেতন, জ্ঞানী, সমকাল সচেতন ও স্বপ্নবাজ হতে হবে। তিনি স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, শিক্ষকের মর্যাদার উপর অনেকটাই নির্ভর করে শিক্ষার গুণগত রূপান্তর। মনে রাখতে হবে, এদেশে কেউ স্বেচ্ছায় শিক্ষকতা পেশায় আসে না। যখন কেউ স্বপ্ন নিয়ে ও স্বেচ্ছায় এ পেশায় যুক্ত হবে, তখনই শিক্ষার মৌলিক পরিবর্তন আশা করা যেতে পারে। সেই স্বপ্ন জাগানোর পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনাই এখন মুখ্য। অন্যদিকে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেও অনেকে শিক্ষক হয়ে উঠতে পারে না। তারা শুধু নিবন্ধিত শিক্ষক হিসেবে চাকরি বজায় রাখেন মাত্র। রয়েছে শিক্ষক নিয়োগে সমস্যা ও প্রেষণার অভাব। মূলত একজন শিক্ষকের সামনে কোনো ক্যারিয়ার প্ল্যান নেই। এ ছাড়াও না-আছে মর্যাদা, না-আছে আর্থিক সুবিধা। এর মধ্যেই নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষককেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতি আর থাকছে না; এ কালের শিক্ষা হবে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। এখন গোটা বিশ্বে টেকসই উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রেও আগে প্রয়োজন টেকসই শিক্ষক। শিক্ষককে টেকসই না হলে ওই পেশাও হারাতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষকতা সব সময়ই চ্যালেঞ্জের পেশা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, প্রযুক্তির রূপান্তর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদির কালে শিক্ষকের ভূমিকা কী, কেমন হতে পারে তা লেখক স্পষ্ট করেছেন তৃতীয় অধ্যায়ে। স্পষ্টত প্রথাগত উপায়ে শিক্ষকতা এখন অচল। একইসঙ্গে লেখক বলেছেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের অন্য সব সফট স্কিলের ক্ষেত্রে ওই একই কথা প্রযোজ্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার বা কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। না হলে শিক্ষার্থীরা এই দক্ষতাগুলো অর্জন করতে পারবে না, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হবে না এবং এতে টেকসই উন্নয়ন ৪-এর অন্তত দুটো লক্ষ্যে গুনগত ও জীবনব্যাপী শিক্ষা পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে যাবে।’ [২০২৩ : ১৭০]
প্রসঙ্গত, এ-বই পাঠের পর সাধারণ পাঠক হিসেবে একটি শূন্যতা অনুভব করেছি। যদিও লেখাগুলোতে শিক্ষাক্রমের বিষয়াবলি নানাভাবে এসেছে। অর্থাৎ, শিক্ষাক্রম কেন্দ্রে রেখে বৈশ্বিক ভাবনা ও তত্ত্ব উপস্থাপন করতে পারতেন লেখক। শিক্ষাক্রমের একটা সাধারণ বিশ্লেষণ বা ভাষ্য সৃজন করা তাঁর পক্ষেই সম্ভব ছিল। এটা অত্যন্ত জরুরি এ কারণে যে, শিক্ষাক্রম না-পড়ে না-বুঝে, একটি গোষ্ঠী অপকথার মাধ্যমে ধূম্রজাল তৈরি করছে। যদিও তা আমলে নেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। আমরা লেখকের মহত্বকে ছোটো করছি না। এ পরিধিতে শিক্ষাক্রমের সাধারণ আলোচনা থাকলে গ্রন্থটি পূর্ণতা পেত বলে মনে করি। তারপরও এ-গ্রন্থ পাঠে আমরা শিক্ষাক্রমের সারার্থ বুঝে নিতে সক্ষম হই। শিক্ষাক্রম প্রসঙ্গে অনেকের ধারণা অতি সামান্য, নেই বললেই চলে। এ শিক্ষাক্রমে কী কী বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, গোলাম ফারুক তা নানা তত্ত্ব, বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা, প্রায়োগিক জ্ঞান, পারিপাশ্বিক বিষয়াবলির সহযোগে উল্লেখ করেছেন। সংক্ষেপে আমরা যা শনাক্ত করি। প্রথমত, শিক্ষার্থীরা এখন আর মুখস্থ করবে না, নিজের আবেগ, অনুভূতি, বিচার বিবেচনায় সমস্যার সমাধান খুঁজে নেবে। দ্বিতীয়ত, কেবলই দক্ষতা একজন শিক্ষার্থীর মেধা, প্রতিভা নিশ্চিত করে না। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করা শিক্ষার অন্যতম লক্ষ। তৃতীয়ত, শিক্ষার্থীরা যা কিছু শিখবে, আনন্দের সঙ্গে শিখবে। চতুর্থত, শিক্ষা হবে নান্দনিক, যেক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক চাপ থাকবে না, পারিপাশ্বিক বিচিত্র অভিজ্ঞতা, জ্ঞান অর্জনের ভেতর দিয়ে তার নিজস্ব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে শিখবে। বস্তুত, এ বই পাঠে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিষয়ক গবেষকসহ সকলেই উপকৃত হবেন।