বইমেলায় গ্রামীণ আবহে নির্মিত স্টলে দর্শনার্থীদের ভিড়
উপরে খড়ের চাল, চারদিকে বাঁশের চাটাই, চালের নিচে ঝুলছে বাবুই পাখির বাসা দেখতে ছোট্ট একটি বাড়ির মতো। কেউ কেউ চারদিকে বাঁশ চাটাই দিয়ে ছোট কুঠির বানিয়ে রেখেছেন, ভেতরে সারি সারি বই। অমর একুশে বই মেলার এমনই গ্রামীণ আবহে স্টল বানিয়েছে বেশ কয়েকটি প্রকাশনী। দৃষ্টিনন্দন এসব স্টলে পাঠকের তুলনায় দর্শনার্থী অনেক বেশি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বই কিনতে আসা পাঠকের তুলনায় দর্শনার্থী সংখ্যা অনেক বেশি। অন্যান্য স্টলের তুলনায় এসব স্টলে তুলনামূলক বেশি। বই নিয়ে বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। তবে স্টল সংশ্লিষ্টদের দাবি যে পরিমাণ লোক সমাগম হচ্ছে, সেই তুলনায় বিক্রি খুবই কম।
এমন বেড়ার ঘর সাদৃশ বইমেলায় স্টল করেছেন আকাশ প্রকাশনী। প্রকাশনীটির ম্যানেজার জাহিদুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, শহুরে জীবনে গ্রামীণ আবহে তুলে ধরতেই এমন নান্দনিক আয়োজন। তাছাড়া আমাদের রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য, বাম রাজনীতির বই, অনুবাদ ও গবেষণা ধর্মী বই। বলা চলে, আমাদের প্রকাশিত বইগুলোর সঙ্গে এমন স্টল বেশ সঙ্গতিপূর্ণ। তাই এভাবে সাজানো হয়েছে।
বই বিক্রির ব্যাপারে জাহিদুজ্জামান বলেন, পাঠক দর্শনার্থীদের তুলনায় কম। দর্শনার্থী আসছেন, ছবি তুলছেন চলে যাচ্ছেন। তবে বিক্রি খারাপ হচ্ছে না ; আশা করি সামনে দিনে এটি আরে বাড়বে।
আকাশ প্রকাশনীটির কয়েক ধাপ এগোতেই শ্রাবণ প্রকাশনী। তারা তৈরি করেছে চাটাইয়ের ঘর। প্রকাশনীটির প্রকাশক রবিন আহসান বলেন, এর আগেও আমরা বোর্ড দিয়ে ঘর সাদৃশ স্টল বানিয়েছিলাম। তা ছাড়া, চাটাই দিয়ে যে এমন ঘর তৈরি করা যায় এটি অনেকেই জানে না। আমাদের যে গ্রামীণ ঐতিহ্য সেটি মাথায় রেখেই এমন স্টল তৈরি করা।
এদিকে সম্পূর্ণ বাঁশ আর শীতল পাটি দিয়ে স্টল তৈরি করেছেন বায়ান্ন প্রকাশন। প্রকাশনীটির বিক্রয়কর্মী তৌফিকুল হাসান শুভ বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখা জন্য আমাদের এ প্রয়াশ। তা ছাড়া, এ স্টল তৈরিতে কৃত্রিম কোনো কিছু দিয়ে ব্যবহার করা হয়নি।
বই বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কিছু বই আছে সেই বইগুলো হীট। আমাদের লেখকদের নির্দিষ্ট ফ্যান বেজ আছে। তাই এবারের মেলাতে বই বিক্রিতে ভালো সাড়া পাচ্ছি।
মেলার বাংলা একাডেমি প্রবেশপথ সংলগ্ন কোয়ান্টাম মেথডের স্টল। এ স্টল সাজানো হয়েছে তালপাতা, বাঁশ ও বাঁশের চাটাই দিয়ে। অবাক করা বিষয় হলে স্টলের ভেতরে একটি বিরাট গাছ। গাছটির বিভিন্ন কাণ্ডে ঝোলানো হয়েছে সারি সারি বই। জ্ঞানের শাখা-প্রশাখা বিস্তারের মধ্য দিয়ে বইগুলোকে বিভিন্ন বই সাজানো হয়েছে।
কোয়ান্টাম মেথডের স্বেচ্ছাসেবী বিক্রয়কর্মী সৈয়দ শফিকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। তাই আমরা অন্যান্যদের তুলনায় আলাদা থাকার চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া, আমরা একটি বার্তাও দিতে চাই এ স্টল থেকে ; স্টলের বাহিরে গ্রামীণ আবহের ছোঁয়া থাকলেও ভেতরে একটি গাছ, যা শিক্ষার ন্যায় এবং গাছের শাখা-প্রশাখা ঝোলানো বই। জ্ঞানের সাথে বই যেমন সম্পর্কিত, তেমনি গাছের সঙ্গেও শাখা-প্রশাখাও বেশ সম্পর্কিত। কারণ বই ছাড়া জ্ঞান যেমন অর্থহীন তেমনি শাখা-প্রশাখা বিহীন গাছও অর্থহীন।
এমএমএ/