মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৫তম জন্মবার্ষিকী আজ
আজ ১৩ নভেম্বর কালজয়ী কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৫তম জন্মবার্ষিকী। মীর মশাররফ হোসেন বাংলা ভাষার একজন অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী। কারবালার যুদ্ধকে উপজীব্য করে রচিত বিষাদ সিন্ধু তার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম।
মীর মশাররফ হোসেন তার বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন। এখন পর্যন্ত মীর মশাররফ হোসেনের মোট ৩৭টি বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে।
মীর মশাররফ প্রথম জীবন থেকেই ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন। ভাষা ব্যবহারে তিনি যে উদার ও মুক্তমনের পরিচয় দিয়েছেন, তা ছিল সেই যুগে দুর্লভ। ‘বিষাদ-সিন্ধু’তে আরবি-ফারসি শব্দ যথাসম্ভব বর্জন করে তিনি সংস্কৃতজ বাংলা শব্দ ব্যবহার করেছেন।
বাঙালি মুসলমানের মধ্যে মীর মশাররফ ছিলেন ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের প্রথম প্রবক্তা। তিনি তার সম্পাদিত পাক্ষিক পত্রিকা ‘হিতকরী’ (১৮৯০) ও সাহিত্যচর্চায় দেশ, ভাষাপ্রীতি ও বাঙালিবোধ উপলব্ধির ক্ষেত্রে আরও প্রাজ্ঞ ও পরিণত হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, বোধ-বিশ্বাস-চেতনায় নিজেকে আরও সুদৃঢ় করেছেন।
মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মীর মোয়াজ্জেম হোসেন এবং মায়ে নাম দৌলতুন্নেছার। তার স্কুল জীবন কেটেছে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে পদমদী ও শেষে কৃষ্ণনগর শহরে। জগমোহন নন্দীর পাঠশালা, কুমারখালীর ইংলিশ স্কুল, পদমদী নবাব স্কুল, কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন বলে তার আত্নজীবনীতে উল্লেখ আছে। তবে তার কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি কিছুদিন কলকাতায়ও বসবাস করেন।
মীর মশাররফ হোসেন মাত্র আঠারো বছরে বয়সে তার পিতার বন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসাকে বিয়ে করেন। তিনি ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেলদুয়ার এস্টেটে ম্যানেজার থাকাকালেই মৃত্যুবরণ করেন। তাকে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির পদমদীতে দাফন করা হয়।
কালজয়ী এই কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া সাহিত্যিকের বাস্তুভিটায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে রবিবার ও সোমবার (১৩-১৪ নভেম্বর) দুই দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিদিন বিকাল ৪টায় আলোচনা সভার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হবে। আলোচনা সভা শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, কুমারখালী উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি ও জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটক মঞ্চায়ন করা হবে।
রবিবার (১৩ নভেম্বর) প্রথম দিনের অনুষ্ঠান
রবিবার আলোচনা অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়েছে। আলোচক হিসেবে থাকবেন সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক ড. আমানুর আমান। এতে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কাজী মনজুর কাদির, কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান, মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম টুকু, কবি ও লেখক আলম আরা জুঁই, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসির সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব উপস্থিত থাকবেন।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান
সোমবার আলোচক হিসেবে থাকবেন বোধোদয় কুষ্টিয়ার সভাপতি লালিম হক। এ ছাড়া উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সরকার বিভাগ কুষ্টিয়ার উপপরিচালক (উপসচিব) মো. আরিফ-উজ-জামান, কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিশির কুমার রায়, কুমারখালী পৌরসভা মেয়র শামছুজ্জামান অরুন, কুমারখালী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরীফ হোসেন, বিশিষ্ট কবি সৈয়দ আবদুস সাদিক, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব সভাপতি আল মামুন সাগর।
এসএন