মঞ্চস্থ হলো
বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানের বন্দিজীবন নিয়ে যাত্রাপালা ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’
মঞ্চে এলো নতুন যাত্রাপালা ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’। বঙ্গবন্ধুর লায়ালপুর জেলখানার বন্দিজীবনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে যাত্রাপালাটি রচনা করেছেন নাট্যকার মাসুম রেজা। নির্দেশনা দিয়েছেন সাইদুর রহমান লিপন।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে পালাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হলো শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায়।
‘নিঃসঙ্গ লড়াই’ এর কাহিনী সংক্ষেপ হচ্ছে: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পরে রাখা হয় লাহোর থেকে আশি মাইল দূরে লায়ালপুর জেল। বিচার নামের এক প্রহসন মঞ্চস্থ হয় বঙ্গবন্ধুর এই জেল জীবনে। অভিযোগ দাঁড় করানো হয় বারোটি। যার ভেতরে ছয়টি প্রমাণিত হলে নিশ্চিত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। বিচারের রায় হয় এবং রায়ে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ ঘোষণা করা হয়। তাঁকে লায়ালপুর জেল থেকে নেওয়া হয় মিয়াঁওয়ালি জেলে যেখানে তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। কবর খোঁড়া হয় তাঁর জন্যে। বঙ্গবন্ধু সেই কবর খোঁড়া দেখতেও পান। তিনি মৃত্যুকে ভয় পাননি। কেবল বলেছিলেন তাঁর লাশটা যেন তাঁর দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এদিকে দেশ স্বাধীন হয় আর বিশ্বনেতৃত্বের চাপে বন্ধ হয়ে যায় ফাঁসি কার্যকরের আয়োজন। পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বিলাত ও ভারত হয়ে দশ জানুয়ারি, উনিশশ’ বাহাত্তুর দেশে ফেরেন তিনি।
পালাটি সম্পর্কে পালাকার মাসুম রেজা বলেন, ‘এই সত্যাশ্রয়ী গল্প নিয়েই আমি যাত্রাপালাটি লিখেছি। এটি আমার লেখা প্রথম যাত্রাপালা। দেশের নানাপ্রান্ত থেকে যাত্রাশিল্পীরা অভিনয় করছেন এই যাত্রাপালায়। তাঁদের অভিনয়ে ঋদ্ধ হবে এই প্রযোজনাটি। তাঁদের অভিনয়শৈলীতে মুগ্ধ হবেন সকল দর্শক। এ আমার একান্ত বিশ্বাস।’
পালা সম্পর্কে নির্দেশক সাইদুর রহমান লিপন বলেন, ‘নিঃসঙ্গ লড়াই রচনার কাঠামোটি ধারাবাহিক বা এপিসোডিক-যাত্রা’র প্রচলিত ‘বই’ বা ‘পালা’র ন্যায় অঙ্ক ও দৃশ্যের বিভাজনে মেলোড্রামাটিক সংকটশীর্ষ (ক্লাইমেক্স) তৈরি করে না। পালাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পাকিস্তানে জেল-জীবনের ঐতিহাসিক দিনগুলিকে পয়ক্রমিভাবে ১১টি দৃশ্যে বিন্যস্ত করা হয়। কিন্তু চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলো-এই গল্প ইতিহাসের সত্য ও তথ্যের আশ্রয়ে আমাদের নিত্য কথনের চেনা-জানা বাস্তবিক চরিত্র-যেমন, বঙ্গবন্ধু, ইয়াহিয়া, জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রভৃতি চরিত্রদের তুলে আনে। ফলে প্রথমে যে সংকটটি সামনে এসে দাঁড়ায় তা হলো-এঁদের আসর বা মঞ্চ-জীবনের স্বরূপ কি বাস্তববাদ দ্বারা নির্ধারিত হবে, নাকি যাত্রার দৈনন্দিন-অতিরিক্ত অভিনয়ের প্রচলিত প্রথা ও শৈলী দ্বারা রূপান্তরিত হবে?’
তিনি বলেন, ‘যাত্রা’র আসর থেকে মেলে এর উত্তর-কেননা, যাত্রার আসরেই তো মাইকেল মধুসূদন, লেলিন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রভৃতি চরিত্রদেরকে চিনে নিয়েছি একরকম করে। তবে আমাদের বঙ্গবন্ধু নয় কেন? কেন নয় ইয়াহিয়া বা ভুট্টো? তাছাড়া, বঙ্গবন্ধুর জনসভা আর তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিকে তাকালে আর কোনো দ্বিধা থাকে না-যে বিশাল পারফরম্যাটিভ ব্যক্তিত্ব নিয়ে নেতা বঙ্গবন্ধু ভাষণ-আসরে এসে দাঁড়ান, সে তো দৈনন্দিনের ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে ছাপিয়ে যায় নিমিষেই।’
কলা-কুশলীরা হলেন: প্রযোজনা উপদেষ্টা লিয়াকত আলী লাকী, নির্দেশনা উপদেষ্টা ওয়াহিদা মল্লিক জলি, প্রযোজনা তত্ত্বাবধান আফসানা মিমি, মঞ্চ ও দ্রব্যসামগ্রী পরিকল্পনা আশিকুর রহমান লিয়ন, আলোক পরিকল্পনা জুনায়েদ ইউসুফ, পোশাক পরিকল্পনা এনাম তারা সাকি, সংগীত পরিচালনা কমল খালিদ, নৃত্য পরিচালনা অমিত চৌধুরী, রূপসজ্জা শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, পোস্টার ডিজাইন চারু পিন্টু এবং বিবেকের গান রচয়িতা শ্যামল দত্ত, হাফিজ রেদু ও জহির রায়হান।
কুশীলবরা হলেন- বঙ্গবন্ধু: মিঠুন ইসলাম টিস্যু, ইয়াহিয়া: এস এম শফি, জুলফিকার আলী ভুট্টো: আফসারুজ্জামান রনি, ব্যারিস্টার ব্রোহি: মোস্তফা জাফরুল আজম, রাজা খান: সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, মালেক: রাহুল মজুমদার, সামরিক ১: শান্তনু সাহা, সামরিক ২: শাহ মো: রইচ উদ্দীন আশীষ, নেভাল কমান্ডার: আবুল কালাম, আজাদ, উইং কমান্ডার: পরিতোষ কুমার সাহা, জেনারেল গুল: লিয়াকত হোসেন, জেনারেল রোয়েদাদ: কাজী রফিকুল ইসলাম, সেশন জাজ: মো: তাহাজ উদ্দীন, সাংবাদিক ১: মো: সানাউল্লাহ, জেলার হাবীব: আসকার আলী ওয়াসিম, লেফটেন্যান্ট মোজাম্মেল: তুষার কান্তি মল্লিক, স্মারক: হরেন্দ্রনাথ মন্ডল, বিবেক: শিশির রহমান, জহির রায়হান, বন্দনা/কোরাস: শাহানাজ পারভীন, লিপি শর্মা, ঝুমা তরফদার, স্বপ্না বিশ্বাস, মিলিতা সরকার, অনুরাধা মন্ডল, মুনজেরিন বিনতে সিথি, হুমায়রা জাহান নীড়, উজমা হাসান ও লিপি পাল। যন্ত্রশিল্পী : গোকুল গোষ, আয়ুব আলী ভুইয়া, রমজানুল হক ইমন, মোহাম্মদ আলী, মানিক খান, ভোলা ভৌমিক, জাহাঙ্গীর মিয়া ও মেহেদী হাসান রাব্বি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে পালাটি প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ।
এপি/এএন