জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী শুরু
সারা দেশের নির্বাচিত ভাস্করদের সৃজনসম্ভার থরে থরে সাজানো। তাতে উঠে এসেছে স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে যাপিত জীবনের চালচিত্র। আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষণের প্রতিচ্ছবি। বালুর মাঝে মাথার খুলি ও লাশের সারির মাধ্যমে মেলে ধরা হয়েছে একাত্তরের গণহত্যার বীভৎসতা। বহুমাত্রিক মাধ্যমে গড়া ভাস্কর্য থেকে বাদ যায়নি যান্ত্রিক শহর ঢাকার যানবাহন ও জনজটের চিত্র। ব্রোঞ্জ, লোহা, সিমেন্ট, কাঠখোদাই ইত্যাদি মাধ্যমে তৈরি হয়েছে ভাস্কর্যগুলো। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার গ্যালারি জুড়ে দেখা গেল এসব ভাস্কর্য।
সারা দেশের ভাস্করদের সৃজনসম্ভার নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী। আনুষ্ঠানিকভাবে তা শুরু হলো সোমবার (২৯ নভেম্বর)। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার দুই ও তিন নং গ্যালারিতে সাজানো হয়েছে এই শিল্পায়োজন।
হেমন্তের বিকেলে চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রদর্শনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ । বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর, বরেণ্য ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান ও শিল্পী অলক রায়। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, হাজার ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে ভাস্কর্য। অথচ সাাম্প্রদাায়িক শক্তি ভাস্কর্যকে মূর্তি আখ্যা দিয়ে মৌলবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। অথচ ভাস্কর্যের সঙ্গে ইসলামের কোনো বিরোধিতা নেই। তাই সংস্কৃতির শক্তি দিয়েই এই অপশক্তিকে রুখতে হবে। কারণ, সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জিত না অর্থনৈতিক সাফল্যের যথার্থ বাস্তবায়ন হবে না।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জানান, এখন থেকে প্রতি এক বছর পরপর এই জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ১৩ জন শিল্পীকে পুরস্কৃত করা হয়। নেইল্ড লাভ শিরোনামের ভাস্কর্যের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা মূল্যমানের প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন বিজন হালদার। শিরোনামহীন শীর্ষক ভাস্কর্যের জন্য দেড় লাখ টাকা মূল্যমানের দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছেন আসমাউল হুসনা মারিয়া। এক লাখ টাকা মূল্যমানের তৃতীয পুরপ্রাপ্ত দিনার সুলতানা পুতুলের কাজের শিরেনাম ভিত্তি স্তম্ভ। এছাড়া ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করা হয় দশ ভাস্করকে। তাঁরা হলেন: লাকী ওসমান, সাগর দে, মোর্শেদ জাহাঙ্গীর, সিগমা হক অঙ্কন, মো. সামিউল আলম, ইসরাত জাহান তন্নী, ইউসুফ স্বাধীন, সুমন বর্মণ, সৈয়দ তারেক রহমান ও জয়তু চাকমা।
প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে সারা দেশের ১০৭ জন ভাস্করের গড়া ১১৪টি ভাস্কর্য। সঙ্গে রয়েছে ১৬ জন আমন্ত্রিত এবং প্রয়াত ৫ জন পথিকৃৎ ভাস্করের ভাস্কর্য। আমন্ত্রিত ভাস্কররা হলেন: হামিদুজ্জামান খান, অলক রায়, শামীম শিকদার, আইভি জামান, মজিবুর রহমান, রাসা, মাহবুব জামাল শামিম, সাইদুল হক জুইস, শেখ সাদি ভূইয়া, শ্যামল চৌধুরী, চৌধুরী জাহানারা পারভীন, রেজাউজ্জামান রেজা, মোস্তফা শরীফ আনোয়ার তুহিন, মাহবুবুর রহমান, প্রণবমিত্র চৌধুরী, মুকুল কুমার বাড়ৈ ও নাসিমা হক মিতু। প্রয়াত পথিকৃত ভাস্কররা হলেন: আব্দুর রাজ্জাক, আনোয়ার জাহান, নিতুন কুণ্ডু, ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ ও ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনী।
প্রদর্শনী চলবে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।