ধর্ম যার যার উৎসব সবার
কুষ্টিয়া শহরের নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কে (আমলাপাড়া মোড় সংলগ্ন) বর্তমান রথখোলায় শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউর মন্দির এবং বৃহদাকার কাঠের রথ নির্মাণ করেন রথটি ঐ সময় সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে বৃহত্তম ছিল। ১৯০৫ সালে (মতান্তরে ১৯০০ সাল) কুষ্টিয়ার গণ্যমান্য হিন্দু ব্যক্তিবর্গের অনুরোধে যশোর জেলার নলডাঙ্গার মহারাজা প্রমথভুষণ দেবরায় তার স্ত্রী’র স্মৃতি রক্ষার্থে মন্দিরের কাঠের রথের সৌন্দর্যবর্ধণে ১৯১৩ সালে পুননির্মাণসহ বহিরাবরণ পিতলের পাত দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছিলেন বাড়াদীর তৎকালীন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মাখন লাল চৌধুরী। পিতলের রথের কারণেই মন্দির চত্বরটি আজও রথখোলা নামে পরিচিত এবং মন্দিরটিকে ‘রথখোলা মন্দির’ নামেও অভিহিত করা হয়। অসামান্য কারুকার্যমণ্ডিত দেবদেবীর মূর্তি শোভিত বিরাট আকারের পিতলের রথটি ছিল বাংলার উল্লেখ্যযোগ্য কারুশিল্প নিদর্শন। তারও আগে মহারাজ প্রমথভুষণ দেবরায় কুষ্টিয়ার বড়বাজারের বারোয়ারি তলার মন্দির নির্মাণের জন্য ভূমি দান করেন। আনুমানিক ১৮৮৬ সালে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাঁদা তুলে দানকৃত জমিতে বড়বাজার সার্বজনীন পূজামন্দির নির্মাণ করেন। সম্ভবত এই মন্দিরটি কুষ্টিয়া শহরের প্রথম মন্দির। প্রতিবছর আষাঢ় মাসে এখানে সাড়ম্বরে রথযাত্রা ও মেলা বসে। এই মন্দিরে সকল ধরনের পূজা হয়ে থাকে। মন্দিরের দায়িত্বে কর্মরত শ্রী অনন্ত মোহন বাগচী। স্থানীয় ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে উভয় মন্দির ও রথ দর্শনীয়। এই মন্দিরে সকল ধরনের পূজা হয়ে থাকে।
১৯০৫ সালে মহারাজা প্রমথভূষণ দেবরায়ের তৈরি প্রকাণ্ড কাঠের রথ দিয়ে যাত্রা শুরু করে ১৯১৩ সালে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মাখন লালের পিতল দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া ঐ বিশালাকার রথটি শত শত ভক্তবৃন্দ আনন্দ-উল্লাসে টেনে গোপীনাথ জিউর মন্দির থেকে বড়বাজার বারোয়ারিতলা সার্বজনীন পূজা মন্দির প্রাঙ্গণে নিয়ে যায়, আবার পুনরায় সাতদিন পর ‘উল্টোরথ’ হয়ে ফিরে আসে রথখোলা মন্দির প্রাঙ্গণে।
লেখক: ইতিহাস গবেষক ও প্রাবন্ধিক