সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে নজরুল পুরস্কার প্রদান
নজরুল সাহিত্য ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক-গবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রথমবারের মতো চালু হওয়া নজরুল পুরস্কার-২০২২ প্রদান করা হয়েছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার (২৯ মে) বাংলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। একাডেমির নজরুল মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও ছিল নজরুল বিষয়ক একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর হাতে পুরস্কারের দুই লাখ টাকার চেক, সম্মাননাপত্র, সম্মাননা-স্মারক এবং পুষ্পস্তবক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। একক বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপক লীনা তাপসী খান।
শুরুতে সদ্যপ্রয়াত সাহিত্যিক-সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর স্মৃতিতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত, মুহম্মদ নূরুল হুদা সম্পাদিত ‘বিদ্রোহী : শতবর্ষে শতদৃষ্টি’ গ্রন্থ উন্মোচন করা হয়।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, নজরুলের অবিস্মরণীয় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার শতবর্ষ উদযাপন এবং বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশে নজরুলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বরণের সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে ‘বিদ্রোহী : শতবর্ষের শতদৃষ্টি’ শীর্ষক এক ঐতিহাসিক স্মারকগ্রন্থ। এছাড়া বাংলা একাডেমীর সেই নজরুল মঞ্চে আমরা বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ভাস্কর চৌধুরী জাহানারা পারভীনের শিল্পভাবনায় বিদ্রোহী কবিতার পূর্ণাঙ্গ রূপ ভাস্কর্য আকারে প্রতিস্থাপন করেছি।
‘কাজী নজরুল ইসলাম : বাংলা সংগীতের নবরূপকার’ শীর্ষক একক বক্তা অধ্যাপক লীনা তাপসী খান বলেন, নজরুল কবিতার মতোই বাংলা গানের ভুবনে নতুন ভোরের বার্তা বয়ে এনেছেন। নজরুল-সংগীত একদিকে যেমন বাণীর বৈচিত্র্যে ভাস্বর, অন্যদিকে অনন্য সব সুরের ধারায় ঋদ্ধ। তিনি বলেন, নজরুল বাংলা গানকে একক প্রচেষ্টায় কালজয়ী উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
কে এম খালিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কবি নজরুলের বিদ্রোহ চেতনাকে তাঁর জীবনে অনন্য ব্যঞ্জনায় উপস্থাপন করেছেন। তিনিই নজরুলকে ভারত থেকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন, জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছেন, তাঁর গানকে বাংলাদেশের রণসংগীত নির্বাচন করেছেন। বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রথমবারের মতো নজরুল পুরস্কার প্রবর্তন একটি অর্থপূর্ণ উদ্যোগ।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সবার জীবনের সঙ্গে নজরুলের যোগ রয়েছে কারণ নজরুল-পাঠ প্রতিটি ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে, অনুপ্রাণিত করে। কিশোর বয়সে নজরুলের পাঠ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, এরপর নজরুলকে নিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে কয়েকটি বই লিখেছি। ক্রমশ বুঝেছি নজরুল কতটা মৌলিক এবং বৃহৎ। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি নজরুলের নামাঙ্কিত পুরস্কার প্রথমবার আমাকে প্রদান করায় আমি কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত।’
সেলিনা হোসেন বলেন, ‘নজরুল বাঙালিত্বকে ধারণ করেছেন এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের গান গেয়েছেন। তাঁর জীবন ও সৃষ্টি বিদ্রোহের যে আভায় মণ্ডিত, আমরা যদি আমাদের জীবনে ও কর্মে তা ধারণ করতে পারি তবেই তাঁকে স্মরণ করা সার্থক হবে।’
সাংস্কৃতিক পর্বে নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী মাহিদুল ইসলাম এবং মো. শওকত আলী। নজরুলগীতি পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী এবং মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন।
এপি/