হাসান আরিফকে নিয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান
শুধু শোক আর স্মরণ নয়, অনুসরণের প্রত্যয়
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফকে স্মরণ করলো বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। হাসান আরিফ এ সংগঠনেরও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘদিন।
শুক্রবার (২৭ মে) সকাল ১১টা থেকে রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় ছিল এ আয়োজন। ‘হাসান আরিফ অতঃপর...’ শীর্ষক এ আয়োজনে ছিল হাসান আরিফ নির্দেশিত বিভিন্ন সংগঠনের প্রযোজনা এবং তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের স্মৃতিচারণ।
হাসান আরিফের বিয়োগে শোকাহত হয়ে শুধু স্মরণ নয়, তার কাজ, সততা-নিষ্ঠা ও চিন্তা-চেতনাকে অনুসরণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনের জন্য সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সংস্কৃতিজনেরা।
সকালে অনুষ্ঠানমালার শুরু হয় হাসান আরিফ নির্দেশিত স্পন্দনের কোরিওগ্রাফী সৈয়দ শামসুল হকের ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ উপস্থাপনার মাধ্যমে। এরপর ছিল অগ্রগণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের স্মৃতিচারণ। অংশ নেন রামেন্দু মজুমদার, আসাদুজ্জামান নূর, নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, গোলাম কুদ্দুছ, ড. মুহম্মদ সামাদ, রাবেয়া রওশন তুলি ও আহকাম উল্লাহ।
এরপর উপস্থাপন করা হয় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শীর্ষক আবৃত্তি প্রযোজনা। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনের জন্য সোহেল আনোয়ার গ্রন্থিত এ প্রযোজনার নির্দেশনা দিতে গিয়েই করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছিলেন হাসান আরিফ। আসাদুজ্জামান নূরের নেতৃত্বে এ আবৃত্তি প্রযোজনায় অংশ নেন ৪০ জন আবৃত্তি শিল্পী।
মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয় অনুষ্ঠান। রাত অবধি চলে কখনো স্মৃতিচারণ, কখনো আবৃ্ত্তি প্রযোজনার উপস্থাপনা।
স্মৃতিচারণ করেন সংস্কৃতিজন মামুনুর রশীদ, শিমুল মোস্তাফা, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, লিয়াকত আলী লাকী, রাইসুল ইসলাম আসাদ, রফিকুল ইসলাম, আহম্মদ গিয়াস, সাংবাদিক আজিজুল পারভেজ, মোরসালিন মিজান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে হাসান আরিফ নির্দেশিত যে সব আবৃত্তি প্রযোজনা উপস্থাপন করা হয় তার মধ্যে ছিল স্বরশ্রুতির ‘প্রবর্তকের ঘুর চাকায়’, স্রোত আবৃত্তি সংসদের ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’, বৈকুণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমি’র ‘পরানের গহীন ভিতর’, তিতাস আবৃত্তি সংগঠনের ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’, শ্রুতিঘর-এর ‘মুক্তিযুদ্ধ নিরন্তর’, দৃষ্টি’র ‘মা’, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের ‘জননী বাংলা’, স্বরব্যঞ্জন-এর ‘ঘুম নেই অতঃপর...’ প্রভৃতি।
স্মৃতিচারণে বক্তারা বলেন, নিজস্ব শিল্প-ভাবনা ও সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য হাসান আরিফ তার সময়ের সবচেয়ে উজ্জ্বল সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার সব সাধনার মূলে ছিল মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণ। আবৃত্তিশিল্পী এবং সংগঠক হাসান আরিফের শারীরিক উপস্থিতির অবসান হয়েছে। কিন্তু সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার বিকাশ এবং অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের চিরন্তন সংগ্রামের মধ্যে হাসান আরিফ অমর হয়ে থাকবেন।
আবৃত্তিচর্চাকে জনপ্রিয় করে তোলার পাশাপাশি হাসান আরিফ নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলোতে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। একাত্তরের ঘাতক- দালালদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন এবং দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা আর জঙ্গিবাদ প্রতিরোধেও সোচ্চার ছিলেন হাসান আরিফ। ১ এপ্রিল (শুক্রবার) রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে করোনা আক্রান্ত হয়ে চার মাস আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এপি/