জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী আজ
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, বুধবার (২৫ মে) প্রেম, দ্রোহ, সাম্যের কবি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হয়ে ওঠা কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সরকারি-বেসকারি উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে কবির স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লায় কর্মসূচি উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ ব্রিটিশ ভারতের বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন।
বাংলা কবিতায় নজরুলের আবির্ভাব একেবারেই উল্কার মতো। হঠাৎ করে একদিন তিনি বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়ে সমস্ত আকাশকে কীভাবে রাঙ্গিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনো গবেষণা হতে পারে। কোন সঞ্জীবনি মন্ত্রে তিনি উচ্চকন্ঠে বলতে পারেন ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির’ অথবা মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না/ অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণ বন্ধ হয়নি কিংবা উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোলও কখনো থামেনি। আর সেই কারণেও নজরুল আমাদের কাছে এখনো প্রাসঙ্গিক। আসলে বিদ্রোহী কবি যেমন ছিলেন নির্ভীক, তেমনি এই প্রেমিক কবি ছিলেন রোমান্টিক। রোমান্টিকতার আতিশয্য ও অভিমানে ভরা তার অনেক গান গত শতকের অনেকটা সময় ধরে বাঙ্গালীর হৃদয় রাজ্যে বিচরণ করছে।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল।
তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।
নজরুলের প্রেম, বিয়ে বিচ্ছেদ, গ্রেফতার, সমাবেশ এবং কাব্য ও সংস্কৃতিচর্চাসহ বহু ঘটনার নীরব সাক্ষী কুমিল্লা শহর। এই কুমিল্লা জেলার দৌলতপুরে সৈয়দা খাতুন নামে এক কিশোরীকে তিনি ভালোবেসেছিলেন। নাম রেখেছিলেন ‘নার্গিস’। ১৯২১ সালে নির্ধারিত বিয়ের দিনটিতেই তাদের বিয়ে ভেঙ্গে যায়। নার্গিসকে নিয়ে তিনি লিখেন ‘বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে’ অথবা ‘আজও মধুরও বাঁশরি বাজে।’এই শহরেই এখনো কবির অনেক স্মৃতি বহমান। নজরুলের স্ত্রী প্রমীলার বাড়িও এখানে। সেই হিসাবে এবার কুমিল্লায় কবির জন্মবার্ষিকীর মুল অনুষ্ঠান করা এবং প্রতিপাদ্য ‘বিদ্রোহী’র শতবর্ষ’ বিশেষ তাৎপর্যময়।
কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে (টাউন হল) আজ সকাল ১১ টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন (রিমি) এমপি, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার ও কবি পৌত্রী খিলখিল কাজী। স্মারক বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও নজরুল গবেষক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় নৃত্যনাট্যসহ ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক পর্ব থাকবে। এ ছাড়া ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা এবং চট্টগ্রামে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে নজরুল মালা, নজরুল বিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন।
জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ ব্যাপকভাবে সম্প্রচার করবে।
বেসরকারি পর্যায়ে ছায়ানট দুই দিনের নজরুল উৎসব আয়োজন করেছে। ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে আজ সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে উৎসব।
এদিকে জন্মবার্ষিকীতে কবি নজরুলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে আজ সকালে।
এপি/এসজি/